এস,আহমেদ প্রতিবেদন :পবিত্র ঈদ-উল-আজহার উপলক্ষে জবাই করা পশুর বর্জ্য এবারো অতি দ্রুত অপসারণ করছে সরজমিন ঘুরে দেখা নগরীর প্রধান সড়ক থেকে অলি গলিতে তেমন কোরবানির বর্জ্য দেখা যায়নি। তবে যারা দ্বিতীয় দিন কোরবানি দিয়েছেন সেইসব বর্জ্য রোববার দুপুরের মধ্যেই অপসারণে ওয়ার্ড ভিত্তিক টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছে চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ।।সদিচ্ছা, আন্তরিকতা আর সমন্বয় থাকলে কোন ‘ভাল’ কাজই অসাধ্য কিংবা অসম্ভব নয়। এই বিষয়টি নিজেই প্রমাণ করে দেখালেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। মেয়রের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পবিত্র ঈদুল আযহায় কোরবানির বর্জ্য খুব দ্রুত অপসারণ করা হয়েছে। ঈদের দিন ও দ্বিতীয় দিন সরজমিন ঘুরে দেখা গত (শনিবার) বিকেল ৫টার আগেই চট্টগ্রাম মহানগরী কোরবানির যাবতীয় পশুবর্জ্য মুক্ত হয়ে যাবে এমনটি কথা দিয়েছিলেন। ঠিকই ওই সময়ের মধ্যেই সাফ-সুতরো হয়ে গেছে নগরী। অনেক জায়গায় বেলা ২টা-৩টার মধ্যেই সবকিছু পরিচ্ছন্ন করা হয়। যা চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নাছিরের সদিচ্ছার ক্ষেত্রে আরও একটি সাফল্যের নজির। এখন আর কোথাও কোরবানি পশুবর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা আর চোখে পড়েনা। নেই কোথাও উৎকট দুর্গন্ধ। ঈদুল আযহায় এ যেন এক অন্যরকম চট্টগ্রাম নগরী। আর সর্বত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন চট্টগ্রাম মহানগরবাসী। বিভিন্ন স্থানে সর্বস্তরের লোকজনের আলাপচারিতায় আজ রোববারও মুখে মুখে উঠে আসে, বন্দরনগরীজুড়ে কোরবানির বর্জ্য খুব দ্রুত অপসারণ হওয়া এবং নাগরিক দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনায় এখন পড়তে হচ্ছে না এসব কথাগুলো। কেউ কেউ বলছেন, খুব কম সময়ে কোরবানি পশুবর্জ্য অপসারণে চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের প্রচেষ্টা ও সফলতার দিকটি দেশের অন্যসব শহর-নগরের জন্যও দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
চসিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন জানান
কোরবানির দিন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে নগরীর প্রধান সড়কে শতভাগ অপসারণ করা হয়েছে। অলিগলি থেকে বর্জ্য অপসারণ করতে আরও দু ঘণ্টা সময় লেগেছে। সব মিলিয়ে রাত ৯ টার মধ্যে মানে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার মধ্যে শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় দিন যারা কোরবানি দিচ্ছেন সেই সব বর্জ্য অপসারণে ওয়ার্ড ভিত্তিক তদারকি টিম আছে। দুপুর ২টার মধ্যে সব বর্জ্য অপসারণ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
চসিক জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪ হাজার শ্রমিক বর্জ্য অপসারণে কাজ করছেন। ব্যবহার করা হচ্ছে ৩৫০টি গাড়ি, পশু জবাইকৃত স্থানে ২০ টন ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছে। এবার ৪টি জোনে ভাগ করে একইসঙ্গে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হয়।
৪টি জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর মোবারক আলী (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড), কাউন্সিলর মো. আবদুল কাদের (২৩, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ড), কাউন্সিলর নুরুল হক (১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড) ও কাউন্সিলর মোরশেদ আকতার চৌধুরী (৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড)।
বর্জ্য অপসারণের বিষয়টি তদারকি করছেন ৪১টি ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্ন বিভাগের সুপারভাইজাররা। তাদের কাজের সুবিধার্থে দেওয়া হয়েছে ওয়াকিটকি, গাড়ি, টমটম গাড়ি। করপোরেশনের পক্ষ থেকে বর্জ্য অপসারণে দামপাড়া চসিক কার্যালয়ে ১টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। চসিকের প্রকৌশল বিভাগের যান্ত্রিক শাখা ও পরিবহন পুল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।১২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরী, দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরীতে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। কীভাবে এবারও কোরবানি পশুবর্জ্য ও আবর্জনা মুক্ত হবে এমনকি আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সবাই ছিলেন চিন্তিত। সেই সাথে ভাদ্রের বৃষ্টিপাতে কোরবানির বর্জ্য শহরময় ছড়িয়ে পড়লে নগরজীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠার শঙ্কা ছিল অনেকেরই মনে। তদুপরি মেয়র নাছির ঈদেও মাত্র একদিন আগে বাসার মেঝে অকস্মাৎ পা পিছলে পড়ে যান। এতে পায়ে ফ্র্যাকচার হয় মেয়রের। কিন্তু এতেও মোটেই দমে যাননি মেয়র আ জ ম নাছির। বরং তিনি বাসায় হুইল চেয়ারে বসেই বাসাকে ‘কন্ট্রোল রুমে’ পরিণত করেন এবং নিজের ঈদের আনন্দ ও পারিবারিক কাজকর্ম বাদ দিয়ে পুরো মহানগরীকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একরকম হাতের মুঠোয় এনে এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত বর্জ্য আবর্জনা অপসারণ কাজের অগ্রগতির বিষয়ে সার্বক্ষণিকভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি দিক-নির্দেশনা দিতে থাকেন। বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের নিয়ে বাস্তব কাজের সফলতার নিশ্চয়তার লক্ষ্যে একটি সমন্বিত টিমকে নিয়োজিত করেন। পশুবর্জ্য অপসারণে নগরবাসীর সহযোগিতা চাওয়া হয়। নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি দেয়া এবং বর্জ্য রাখার জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ঈদের আগে গত এক সপ্তাহ যাবত নগরবাসীর সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করা হয়। এতে আমরা আশানুরূপ সাড়া মিলে। আর এভাবেই চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ড ঈদের দিনে বিকেল ৫টায় নির্ধারিত সময়ের আগেই কোরবানির বর্জ্যমুক্ত সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগরী হয়ে ওঠে।
ঈদের দিন (শনিবার) ও রোববার মহানগরীর জামাল খান, আন্দরকিল্লা, দেওয়ানবাজার,চকবাজার, চন্দনপুরা, কাজীর দেউড়ি, ষোলশহর, মুরাদপুর, খুলশী, বাকলিয়া, এনায়েতবাজার, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে কোরবানি পশুবর্জ্য ও দূর্গন্ধমুক্ত দেখা গেছে সর্বত্র। এ সময় এলাকাবাসীকে সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বিকেল ৫টার মধ্যেই পুরো নগরীর কোরবানির পশুবর্জ্য অপসারণ করব। এরজন্য আমি আগেই কয়েকটি প্রস্তুতি ও সমন্বয় সভা করেছি। ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আমরা সব জায়গায় বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। নগরবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে মেয়র বলেন, শুধুই একটি দুর্ভাগ্যের বিষয়, শুক্রবার বাসায় পড়ে গিয়ে পায়ে একটা ফ্র্যাকচার হয়েছে। যার কারণে একান্ত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাসা থেকে বের হতে পারিনি। সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে হবে ২১ দিন। তাই পুরো মহানগরীটা প্রদক্ষিণ করার ইচ্ছে থাকলেও তা পারিনি। তবে আমি নিজেই সার্বক্ষণিক যোগাযোগ এবং সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সমন্বয় বজায় রেখেছি। কোরবানিদাতাদের সুবিধার জন্যও বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এরফলে নগরীকে দ্রুত বর্জ্যমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এতে আমিও সন্তুষ্ট, নগরবাসীও স্বস্তিতে আছেন। আগামী বছর এই উদ্যোগটাকে একশ’ ভাগ সফলতায় উন্নীত করব ইনশাআল্লাহ।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ভাঙাচোরা সড়ক, রাস্তাঘাট সংস্কার প্রসঙ্গে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গভীর প্রত্যয় ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই মহানগরীর রাস্তাঘাট সড়কগুলোর সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হবে। তখন আর ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে রাস্তাঘাটের এ সমস্যা থাকবে না। তিনি উল্লেখ করেন, এ বছর ঘন ঘন অতিবৃষ্টি ও সামুদ্রিক জোয়ারের কারণে নগরীর রাস্তাঘাট সড়কগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার চট্টগ্রামবাসীর সমস্যা নিরসন ও উন্নয়নের ব্যাপারে সবসময়ই আন্তরিক।