ব্রেকিং নিউজ» আবারো অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে বন্দরনগরী

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ। যেখানে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র। উন্নয়ন, বিনিয়োগ, সম্ভাবনা আর সমৃদ্ধির প্রতীক সেই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের চারিদিকে পানি। আষাঢ়ের টানাভারী বর্ষণ নয়, নিয়মিত জোয়ারে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বাণিজ্যিক এলাকা।
জোয়ারে রাতে দিনে দুইবার প্লাবিত হচ্ছে দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জসহ নগরীর অনেক বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা। প্রতিবছরের মতো এবারের বর্ষায়ও জোয়ারে ভোগান্তিতে পড়েছে চাটগাঁবাসী। গত কয়েক দিনে অস্বাভাবিক জোয়ারে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে নগরীর বিশাল এলাকার বাসিন্দারা। করোনাকালে জনজীবনে দুর্ভোগের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যও বিঘ্নিত হচ্ছে।
নগর পরিকল্পনাবিদের মতে ১৯৯৫ সালের মাষ্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না করা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন, খাল, ছড়া, উম্মুক্ত জলাশয় ও নিচু ভূমি ভরাট করে ফেলায় জোয়ারে নগরী প্লাবিত হচ্ছে। কর্ণফুলীতে ড্রেজিং না হওয়ায় এবং নগরীর খাল- নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর জোয়ারের উচ্চতা বাড়ছে। আর তাতে নতুন নতুন এলাকায় জোয়ারের পানি উঠছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীর বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের এ পানিবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত করতে গত তিন বছরে হাজার কোটি টাকার তিনটি মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে এখনও এসব প্রকল্পে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সুফল মিলছে না। বরং কয়েকটি বড় বড় খালের মুখে প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে দুর্ভোগ আরো বাড়ছে।
নগরীর প্রধান দুটি খাল চাক্তাই খাল ও মহেষখালের মুখে সুইস গেইট নির্মাণের কাজ চলছে। এ দুুটি খাল হয়ে জোয়ারের পানি আসছে। তাতে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের বাকলিয়া, পাথরঘাটা, ডিসি রোড, দেওয়ানবাজারসহ বিশাল এলাকা হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বৃহত্তর চান্দগাঁও এলাকায়ও জোয়ারের পানি উঠছে। মহেষ খাল হয়ে আসা জোয়ারে তলিয়ে যাচ্ছে বৃহত্তর আগ্রাবাদ, হালিশহর এবং পাহাড়তলীর অনেক এলাকা। আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের নীচতলা প্রতিদিনই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে রোগী ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগের শেষ নেই।গ্রাবাদ বহুতলা কলোনী, সিডিএ আবাসিক এলাকা, আবিদর পাড়া, বেপারিপাড়া, হাজিপাড়া, মুহুরিপাড়া, গোসাইল ডাঙ্গা, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের আশপাশের শান্তিবাগ, গুলবাগ আবাসিক এলাকা, ছোটপুল পুলিশ লাইন, হালিশহর হাউজিং এস্টেটসহ বিশাল এলাকায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। জোয়ারের পানিতে বাসা বাড়ির মালামাল, গুদাম আড়তের পণ্য বিনষ্ট হচ্ছে। জোয়ারের পানি ঠেকাতে এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি সড়ক ও নালা উচুঁ করা হয়েছে। এতে অলিগলি আর বসতবাড়িতে জোয়ারের পানি আটকে স্থায়ী পানিবদ্ধতা হচ্ছে।
বছরের পর বছর ধরে চলা এ দুর্ভোগ থেকে চট্টগ্রাম নগরীকে রক্ষায় প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকায় একটি মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম শহরের পানিবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নগরীর চাক্তাই খালের মাথা থেকে কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে কালুঘাট সেতু পর্যন্ত উপকূলীয় একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছে সিডিএ।এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন শীর্ষক আরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়ণ করছে। এসব প্রকল্পের আওতায় নগরীর ছোট বড় ৪০টি খালের মুখে সুইস গেট বা রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে। এসব রেগুলেটর চালু হলে নগরীতে জোয়ারের পানি আসবে না। কয়েকটি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে আগামী বছর নাগাদ জোয়ারের দুর্ভোগ কমবে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা এড়াতে খাল-নালায় জমে থাকা আবর্জনা অপসারণ এবং আটকে থাকা পানি দ্রুত নিষ্কাশনে সেনাবাহিনীর আটটি টিম কাজ করছে। এর মধ্যে চারটি নিয়মিত টিম এবং চারটি কুইক রেসপন্স টিম। নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় তারা এ দায়িত্বপালন করছেন।
নগরীকে চারটি জোনে ভাগ করে এ কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রকশান ব্রিগেডের কর্মকর্তারা জানান, এবার বর্ষার আগেই নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের ২৪০ কিলোমিটার নালার আবর্জনা পরিস্কার করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্ত ও গভীরতা বাড়িয়ে নতুন ৫২.৮৮ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। নগরীর ২২টি স্পটে পানি আটকে পানিবদ্ধতা হয়। এসব এলাকার নালা নর্দমা দ্রুত পরিস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।