প্রত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ধোপাছড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ।

ধোপাছড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার অন্তর্গত একটি

ইউনিয়ন।ধোপাছড়ি ইউনিয়নের আয়তন ১৪,২৭৭ একর (৫৭.৭৮ বর্গ কিলোমিটার)। এটি চন্দনাইশ উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন চন্দনাইশ উপজেলার প্রত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ধোপাছড়ি। এই ধোপাছড়িতে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বিশাল বনের সারি সারি বৃক্ষরাজি ও বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ একটুখানি হলেও মনে করিয়ে দেবে সুন্দরবনের কথা। প্রাকৃতিভাবে সৃষ্ট বিশাল এই বনে এখনও দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, বানর, বনমোরগসহ অসংখ্য প্রজাতির পাখপাখালী। অনন্য জীববৈচিত্র্যের সমারোহে ভরপুর ধোপাছড়িকে এককথায় বলা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি।

আধুনিক নৌ-যোগাযোগে যাতায়াত ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় কিছু সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলা গেলে এখানে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ধোপাছড়ির চারদিক নদী আর পাহাড়বেষ্ঠিত হওয়ায় এখানে সরাসরি সড়কপথে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। পাহাড়ি এই এলাকায় যাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে নদীপথ। শঙ্খ নদীপথে ইজ্ঞিনচালিত নৌকায় ছাড়া এখানে সরাসরি যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে সল্ফপ্রতি সিএনজি অটোরিকশা ও চাঁদের গাড়িতে করে যাওয়ার স্বল্পতম ব্যবস্থা হলেও কমপক্ষে তিনবার পাড়ি দিতে হবে শঙ্খ নদী। পাহাড়, নদী ডিঙ্গিয়ে এক রোমাঞ্ছকর ভ্রমণ শেষে পৌঁছাতে হয় এখানে। ভ্রমণকালীন সময়ের অভিজ্ঞতাও যে কত মধুর হয় তা সশরীরে না এলে বোঝার উপায় নেই।

নদীপথে ভ্রমণের সময় নদীর দুই পাড়ে পাহাড় এবং বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল বনরাজি খানিকটা হলেও নিয়ে যাবে সুন্দরবনের সেই অপরূপ দৃশ্যের কাছে। প্রকৃতির অপরূপ শোভায় শোভিত এই ধোপাছড়ি প্রতিনিয়ত হাতছানি দিচ্ছে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের। তারপরও যে এই ধোপাছড়ি দেখতে খুব কম পর্যটক আসছে তা নয়। প্রতি শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দল বেঁধে নিয়মিত ধোপাছড়ির নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে আসছে।

চন্দনাইশ উপজেলার পূর্বসীমান্তে অবস্থিত বিশাল একটি ইউনিয়ন এই ধোপাছড়ি। এই ধোপাছড়ি ইউনিয়নটির পুরোটাই যেন প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও ধোপাছড়িতে এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। প্রাকৃতিকভাবে এখানে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য লেক, ঝর্ণা। আর পাহাড়ে রয়েছে হাজার প্রজাতির বিশাল বৃক্ষরাজি। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের বৃহত্তম সেগুন বাগান এই ধোপাছড়িতেই রয়েছে। আর এসব বাগান রক্ষায় ধোপাছড়ি ইউনিয়নেই বনবিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে দুটি বনবিট। বাংলাদেশে একটি ইউনিয়নে দুটি বনবিট স্থাপনের দৃষ্টান্ত এই ধোপাছড়ি ছাড়া আর কোথাও নেই। এখানে রয়েছে ১৯২৬, ১৯৪২ এবং ১৯৬৩ সালে স্থাপিত সেগুন বাগান। এটি প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা অভয়ারণ্য। ৪০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত ধোপাছড়িতে রয়েছে- হরিণ, বানর, শিয়াল, বাঘডাস, মেছোবাঘ, বনমোরগসহ শতাধিক প্রজাতির বন্যপাখী। এ বনে এখনও দেখা মেলে দুর্লভ প্রজাতির কালো ভালুক (এশিয়াটিক ব্যাকবিয়ার), বাঁশভালুক, মদনটাক পাখিসহ আরও কিছু বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী। তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে চন্দনাইশের ধোপাছড়ি ও রাঙ্গুনিয়ার দুধ পুকুরিয়াকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে। তবে পুরো ধোপাছড়িকে পর্যটনের আওতায় আনার জন্য ইতিমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে