এক যোগে কাজ করার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো:প্রধানমন্ত্রী

 

আজ সোমবার(১২অক্টোবর)দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ওপর এবার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩অক্টোবর) আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।তিনি বলেন,দুর্যোগের কারণে আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতি প্রশমনের পাশাপাশি সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য কর্মসূচিও সরকার বাস্তবায়ন করছে।’’আগামীকাল ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এবার মূল অনুষ্ঠান হবে ওসমানী মিলনায়তনে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ১৩ অক্টোবর সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী উদ্যানে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২০’ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে  ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী জানান,২০৪১ সালে  উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমাদের প্রচেষ্টাকে সার্থক করতে হলে দুর্যোগ মোকাবিলা বিষয়ে সকলের সচেতনতা প্রয়োজন।সবাই মিলেই দেশটাকে এগিয়ে নিতে হবে। আর এই সুশাসনের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাও একটি টেকসই ব্যবস্থাপনা হবে। তার ওপর ভিত্তি করে টেকসই বাংলাদেশ হবে।’সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে উন্নয়নের ধারাকে টেকসই করতে দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই সচেতন থাকবেন প্রত্যাশা করে তিনি। বিভিন্ন স্টেক হোল্ডার আছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে, এনজিও আছে,  সুশীলসমাজ আছে, রাজনীতিবিদ আছেন তাদেরকে নিয়েই এই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।এক যোগে কাজ করার মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,জাতি পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচি প্রণয়নের পথিকৃৎ। প্রতি বছরের ন্যায় দেশব্যাপী ১৩ অক্টোবর আর্ন্তজাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২০ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে সুশাসন, নিশ্চিত করবে টেকসই উন্নয়ন’ যথার্থ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে জনগণের জানমাল রক্ষায় ‘মুজিব কিল্লা’ নির্মাণ করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’ প্রতিষ্ঠা করেন।

 এই দিবসটির উপলক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ, ক্রোড়পত্র প্রকাশ, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে `টকশো`, সড়কদ্বীপ সজ্জা,চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরোও জানান,জাতির পিতার আদর্শের অনুসরণে আওয়ামী লীগ সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্যোগ থেকে জনগণের জানমাল রক্ষায় তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি অংশীজনের দায়দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে ১৯৯৭ সালে আমরাই প্রথম স্ট্যান্ডিং অডারর্স অন ডিজেস্টার প্রণয়ন করি।পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বে প্রশংসিত এ দলিলটি ২০১৯ সালে হালনাগাদ করা হয়েছে যেখানে বজ্রপাত, পাহাড় ধস, ভূমিকম্প, অগ্নিকান্ড, রাসায়নিক দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনাসহ সকলের করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।এবারের অনুষ্ঠানের কিছু বিশেষ দিক আছে। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ হাজার ৫০৫ জন নারী স্বেচ্ছাসেবীর (সিপিপি ভলান্টিয়ার) সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেনস। এর মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।পূর্ব প্রস্তুতি নিশ্চিত করার কারণে আজ প্রাকৃতিক দুর্যোগে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি নূন্যতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, সম্পদ, সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়ে প্রণীত ১০০ বছরের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ এ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণকে উন্নয়নের অংশীদার করে তাদের জীবনমানের উন্নতির জন্য সরকার কাজ করছে। প্রতিটি গৃহহীন মানুষকে দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছানোর লক্ষ্যে গ্রামীণ অবকাঠামো টেকসইভাবে নির্মাণের জন্য সম্প্রতি ৫৭৮৫ কিলোমিটার হেরিংবোন বন্ড রাস্তা, ২৬,৩৩১টি সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।চলতি অর্থবছরে ১৭ হাজার ৫০০ পরিবারকে দুর্যোগ সহনীয় ঘর দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সেটিও তিনি উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন।

এছাড়া বাংলাদেশের কোনও মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সে উপলক্ষে একটি তালিকাও করা হয়েছে। সেখানে ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৩টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। যাদের ভূমি নাই তাদের ২ শতাংশ ভূমি দেওয়া হবে এবং পাকা ঘর করে দেওয়া হবে। আর যাদের ভূমি আছে কিন্ত ঘর নাই, তাদের ঘর করে দেওয়া হবে।নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমরা বিশেষ কর্মসূচি চালু করেছি। এজন্য ইতোমধ্যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সর্বস্তরের মানুষকে বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদানসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়া স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য গত পাঁচ মাস যাবৎ খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা চালু রয়েছে। এ সকল জনবান্ধব কর্মসূচি বাস্তায়নে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় সরকার সচেষ্ট আছে।