ঢাকাই সিনেমার গ্রাম-বাংলার সাধারণ মানুষের প্রিয় নায়িকা:রোজিনা

ঢাকাই সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা রোজিনা। ঢালিউডের স্বর্ণালী সময়ে তিনি চুটিয়ে কাজ করেছেন। অভিনয় করেছেন অসংখ্য সফল সিনেমায়। রূপ-লাবণ্য আর অভিনয় দক্ষতায় দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। গ্রাম-বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে তিনি প্রিয় নায়িকা।মঙ্গলবার রোজিনার জন্মদিন। ১৯৫৫ সালের এই দিনে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার আসল নাম রওশন আরা রেণু।

ছোটবেলা থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি প্রচুর আগ্রহ ছিল রোজিনার। বাড়ির পাশে চিত্রা সিনেমাহলে নিয়মিত সিনেমা দেখতেন তিনি। এই সিনেমার নেশা তাকে পড়াশোনা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল।

৭২-৭৩ সালের দিকে সিনেমায় অভিনয় করার মনোবাসনা নিয়ে ঢাকা আসেন। বড়পর্দায় আসার আগে মঞ্চ ও কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করে নিজের অভিনয়শৈলীকে শানিত করে রেখেছিলেন তিনি। এজন্য প্রথমে জড়িত হন শাওন সাগর নাট্যগোষ্ঠীর সাথে।
১৯৭৬ সালে ‘জানোয়ার’ নামক চলচ্চিত্রের সহনায়িকা হিসেবে সিনেজগতে পদার্পণ করেছিলেন। পরিচালক মহিউদ্দীন তার নামটি পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন রোজিনা। রাতারাতি তিনি রেনু থেকে হয়ে গেলেন রোজিনা। মিন্টু আমার নাম ছবিতে তিনি প্রথম রোজিনা নামে হাজির হন। এ সময় তিনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল মায়া বড়ির বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে বেশ আলোচিত হন। বিজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করা হত।

একক নায়িকা হিসেবে রোজিনা কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন এফ কবির পরিচালিত ‘রাজমহল’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তৎকালীন সময়ে সিনেমাটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এরপর আর রোজিনাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক ব্যবসা সফল ছবি উপহার দিয়েছেন। শাবানা, ববিতা, সুচরিতার পাশাপাশি তিনিও হয়ে ওঠেন একজন সুপারহিট এবং দামী তারকা।
রোজিনা অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে- ‘চোখের মণি’, ‘সুখের সংসার’, ‘সাহেব’, ‘তাসের ঘর’, ‘হাসু আমার হাসু’, ‘হিসাব চাই’, ‘বন্ধু আমার’, ‘কসাই’, ‘জীবনধারা’, ‘সুলতানা ডাকু’, ‘মানসী’, ‘দোলনা’, ‘দিনকাল’, ‘রসের বাইদানী’, ‘জীবনধারা’, ‘রূপবান’, ‘আলোমতি প্রেমকুমার’, ‘হামসে হায় জামানা’সহ প্রায় তিনশত ছবিতে অভিনয় করেছেন পদ্মা পাড়ের মেয়ে রোজিনা। বিদেশি ছবিতেও তিনি অভিনয় করেছেন।

একজন সফল চিত্রনায়িকা হিসেবে রোজিনা দেশ-বিদেশে সমাদৃত হন। ১৯৮০ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘কসাই’ ছবিতে পতিতা আঙুরীর চরিত্রে অভিনয় করে পান বছরের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে মতিন রহমান পরিচালিত ‘জীবন ধারা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য দ্বিতীয়বারের মত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন রোজিনা।
এ ছাড়া ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানে ‘হাম দো হায়’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পাকিস্তানের ‘নিগার এ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে ভারতীয় উপ-মহাদেশে চমক সৃষ্টি করেন এবং বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে নিয়ে আসেন। রোজিনা তৎকালীন ভারতের জনপ্রিয় নায়ক মিঠুন, পাকিস্তানের জনপ্রিয় নায়ক নাদিমসহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত বহু অভিনেতার বিপরীতে নায়িকা হিসাবে অভিনয় করেছেন।

অভিনয়ের জন্য চিত্রনায়িকা রোজিনা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ হতে ছোট বড় প্রায় ১৫ টি অন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করে নজির সৃষ্টি করেন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তার অভিনীত ছবির সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫৫টি। ১৯৯০ সালের পর তিনি কলকাতায় পাড়ি জমান এবং সেখানে প্রায় ২০টি সফল ছবিতে নায়িকা হিসাবে অভিনয় করেন। ২০০৫ সালে রাক্ষুসী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ইতি টানেন।

কিছু দিন আগে রোজিনা সিনেমা নির্মাণ শুরু করেছেন। তার নির্মিত প্রথম সিনেমা ‘ফিরে দেখা’। এতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন নিরব ও স্পর্শিয়া। সিনেমাটি সরকারি অনুদানে নির্মিত হচ্ছে।