ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ধেয়ে আসছে আইলার চেয়ে বেশি শক্তিতে বাংলাদেশে

২০২০-র করোনা লকডাউনের শুরুতেই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে বাংলার উপকূল অভিমুখে ধেয়ে এসেছিল সুপার সাইক্লোন আম্ফান। আম্ফানের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবন। সেই আম্ফানের বর্ষপূর্তি হতে না হতেই আরও এক ভয়ঙ্কর ঝড়ের পূর্বাভাস শোনায় হাওয়া অফিস। সুপার সাইক্লোন আম্পান। যার দগদগে ঘা এখনও শুকায়নি। সেই আম্পানের বর্ষপূর্তি না হতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝেই বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত হতে চলা আরও একটি ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। ঘূর্ণিঝড়টি আগামী ২৫-২৬ মে বাংলাদেশের স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, ২২ থেকে ২৩ মে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এসময় তা ক্রমান্বয়ে নিম্নচাপে রূপ নেবে। পরে এই নিম্নচাপ ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয়েছে ‘ইয়াস’। তবে ঘূর্ণিঝড়টি কোন কোন এলাকায় আঘাত হানতে পারে তা আরও কয়েকদিন পর সুস্পষ্টভাবে জানা যাবে।

এদিকে, ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ধেয়ে আসার পাশাপাশি আরব সাগরে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে, যার নাম হবে ‘গুলাব’।

‘দ্য ফ্রি প্রেস জার্নাল’ বলছে, ‘ইয়াস’ নামটি দিয়েছে ওমান এবং শব্দটির উৎপত্তি পার্সি ভাষা থেকে। ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘জেসমিন’। আর পার্সি ভাষায় Yass-এর উচ্চারণ ‘ইয়াস’। আরবিতে যার অর্থ ডেসপেয়ার বা হতাশা।

মূলত ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করে মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন ও ইউনাইডেট নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়ার সদস্য দেশগুলো। আর এ জন্য ১৩ সদস্যের একটি প্যানেলও রয়েছে। এর সদস্য দেশগুলো হলো- ভারত, ইরান, মলদ্বীপ, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন। সদস্য দেশগুলোর প্রত্যেকে প্রতিবছর ১৩টি করে নাম প্রস্তাব করে এবং সেখান থেকে নির্বাচিত নামের একটি তালিকা তৈরি হয়।

সবমিলিয়ে সংখ্যাটা ১৬৯। ওমান যেমন ইয়াস নাম দিয়েছে, তেমনই এর পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নামটা নেয়া হয়েছে পাকিস্তান থেকে। যার নাম গুলাব। তারপরেই আছে কাতার। তাদের দেওয়া সাইক্লোনের নাম শাহিন। এভাবেই ক্রমান্বয়ে সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেনের দেয়া ঝড়ের নামই ব্যবহার করা হবে।

আবহাওয়াবিদ সুজীব কর আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ঝড়টা আম্পানের চেয়েও ভয়ানক হবে এবং এটি পাস করতে অনেক বেশি সময় নেবে।

২০০৯ সালে আয়লার সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় আম্পান বয়ে গিয়েছিল ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটারের গতিতে। এবার তাহলে কতটা দাপট দেখাবে ইয়াস? এটাই এখন সবার আশঙ্কা।

আবহাওয়াবিদ রামকৃষ্ণ দত্ত বলেন, আইলা যেমন ক্ষতি করেছিল, তার চেয়ে বেশি গতিসম্পন্ন হবে ইয়াস। যত বেশি জলে থাকবে তত বেশি শক্তি সঞ্চয় করবে, আইলার চেয়ে বেশি প্রভাব থাকবে এর। এটা যেহেতু পূর্ণিমার সময় হচ্ছে, তাই জলোচ্ছ্বাসও আরও ২ মিটার বেশি হবে।