এস আহমেদ ডেক্স প্রতিবেদনঃ ২৩ জুন দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আন্দোলন, সংগ্রাম, ঐতিহ্য ও সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ৭৩ বছরে পদার্পণ করেছে দলটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম শুরু করে আওয়ামী লীগ। চড়াই-উতরাইয়ের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ‘নৌকা’ প্রতীকে মিশে আছে সংগ্রাম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর আকাশছোঁয়া সাফল্যের গৌরবগাথা। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের শক্তির মিশেলে আজো অপ্রতিরোধ্য আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা- উন্নয়নের মহাসড়কে বাঙালি জাতিকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণের। দুর্নীতি, মাদক, জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যাবে আওয়ামী লীগ, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ-এমন প্রত্যাশা বিশ্লেষকদের।
৭২ বছর পরেও বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের গণমানুষের শান্তি-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।। পুরান ঢাকার রোজগার্ডেন থেকে গণভবন। ভাড়া বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সুরম্য ১০ তলা কেন্দ্রীয় কার্যালয়। স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের দমন-পীড়ন থেকে পরপর তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতা। ভাষার অধিকার আদায় থেকে ভাতের অধিকার নিশ্চিত করা। সুদীর্ঘ সাত দশকে স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব, সংবিধান প্রণয়ন, জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব, কোভিড বিশ্বেও উন্নয়নের রোল মডেল, মেট্রোরেল থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল- উন্নয়নের মহাযজ্ঞের নেতৃত্বের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। জাতীয়তাবাদ (বাঙালি), গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার তারকাখচিত চার মূলনীতি নিয়ে ৭২ বছরে পথচলা।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের কাজী হুমায়ুন রশীদের ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। আড়াইশ-তিনশ লোকের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী দলের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ।’ সভাপতি মওলানা ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আর ট্রেজারার হন ইয়ার মোহাম্মদ খান। সেই সঙ্গে পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনের নাম রাখা হয় ‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’, যার সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। দীর্ঘ পথচলায় রক্তের আখরে লেখা দলটির সংগ্রাম ও সাফল্যের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতাসহ অগণিত নেতাকর্মীর আত্মদানে সমৃদ্ধ আওয়ামী লীগ। লক্ষ্য একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠন ও বিশ্বের বুকে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সাম্যের সমাজ নির্মাণের আদর্শ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করে আওয়ামী লীগ। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।
আওয়ামী লীগ শুধু এ দেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারাও। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা।
সাফল্য হিমালয়সম: প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাঙালি চেতনার ধারক-বাহক হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, বাষট্টির শিক্ষানীতি, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ষেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশের মানুষকে সংগঠিত করেছে আওয়ামী লীগ। পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে ২৪ বছরের লড়াই-সংগ্রামের পরিণতি পায় মহান একাত্তরে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত হয় লাল-সবুজের পতাকা ও বাংলাদেশের মানচিত্র। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সব অর্জন ও সমৃদ্ধির ইতিহাসের পাতার পরতে পরতে একটিই নাম আওয়ামী লীগ।
বিভিন্ন সময় সরকারি দলের দমন-পীড়ন, ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড বঙ্গবন্ধু হত্যা, কলঙ্কজনক জেল হত্যাকাণ্ডসহ কঠিন চড়াই-উতরাইয়ের ভেতর দিয়ে ৭২ বছরের আওয়ামী লীগকে বর্তমান অবস্থানে আনতে পিতা-কন্যার অবদানই সর্বোচ্চ। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে সংবিধান প্রণয়ন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত শূন্য অর্থনীতিকে চাঙা করে তোলেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ঘাতকের বুলেটে বাস্তবে রূপান্তর করতে পারেননি। বর্তমানে পিতার স্বপ্ন পূরণ করছেন তার কন্যা। ডিজিটাল বাংলাদেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলের মধ্য দিয়ে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল করে চলেছেন।
ধর্মান্ধ পাকিস্তানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির উন্মেষ ঘটিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রথম সফলতা, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদ, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল ভোরের কাগজকে বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের অতুলনীয় ভ‚মিকা ছিল। তৎকালীন পূর্ববাংলার জনগণের প্রত্যাশাকে প্রতিনিধিত্ব করেছে দলটি। আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রতিনিধিত্ব করে জনগণের কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছে। ভাষা ও সাংস্কৃতিকভিত্তিক জাতীয়তাবাদ গঠন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করেন তিনি।
পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ : জাতিকে স্বপ্ন দেখানো আওয়ামী লীগের ওপর মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। দলটির সামনে চ্যালেঞ্জও পাহাড়সম। একদিকে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের কঠিন চ্যালেঞ্জ অন্যদিকে অসমাপ্ত বিশেষ প্রকল্পের কাজ ঠিক সময়ে শেষ করার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা মহামারি মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জন্মলগ্ন থেকেই কাকরবিছানো পথে হাঁটছে আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রীয় মদতে বারবার আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চলেছে। যে বুলেটে প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর, সেই বুলেট আজো তাড়া করে ফিরছে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। তবুও পিতার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে চলেছেন আলো হাতে আঁধারের যাত্রী।