যে গ্রামের অলিগলিতে বসে ক্লাস, ঘরের দেয়াল ব্ল্যাকবোর্ড

যে গ্রামের অলিগলিতে বসে ক্লাস, ঘরের দেয়াল ব্ল্যাকবোর্ড
প্রত্যন্ত গ্রামটির অলিগলির পাশে থাকা ঘরের দেয়ালগুলো ব্ল্যাকবোর্ড। আর গ্রামের অলিগলিগুলো ক্লাসরুম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমানের জোবা আটপারা গ্রামে গেলে চোখে পড়বে এমন দৃশ্য। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এই ক্লাসরুমে যিনি ক্লাস নিচ্ছেন, তাঁর নাম দীপ নারায়ণ নায়েক (৩৪)। নামের মতোই গ্রামটিতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন দীপ। করোনাভাইরাস মহামারিতে ভারতে দীর্ঘদিন বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উন্নতির জন্যই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে সময়েই এমন পদক্ষেপ নেন শিক্ষক দীপ নারায়ণ। গ্রামের অলিগলির পাশে থাকা বাড়িগুলোর দেয়ালকে তিনি ব্ল্যাকবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করেন। রাস্তার ওপরই শিশুদের পড়াশোনা শেখাতে শুরু করেন। শিশুরা এ রকমই একটি দেয়ালে আঁকা বোর্ডে চক দিয়ে লিখছে। পাশেই নায়েক আরেক শিশুকে শেখাচ্ছেন কীভাবে মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করতে হয়। গ্রামটিতে ইন্টারনেটের সুবিধা কম। নায়েক ল্যাপটপে শিশুদের শেখাচ্ছেন ইন্টারনেটের নানা ব্যবহার। নায়েকের কাছে লেখাপড়া শেখে কিরণ তুরির সন্তান। কিরণ তুরি রয়টার্সকে বলেন, বিধিনিষেধ আরোপের সময় থেকে আমাদের শিশুদের লেখাপড়া বন্ধ। শিশুরা ঘোরাফেরা করে সময় কাটাত। শিশুদের পড়াশোনা চলমান রাখতে এগিয়ে আসেন শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়েক। নায়েক মহামারির এ সময়টায় শিশুদের সবকিছুই শিখিয়েছেন। নার্সারিতে পড়া শিশুদের তিনি যেমন ছড়া শিখিয়েছেন, তেমনি মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার নিয়ম ও গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। নায়েকের স্কুলে শিক্ষার্থী প্রায় ৬০ জন। গ্রামবাসী ভালোবেসে নায়েকের নাম দিয়েছেন পথশিক্ষক (টিচার অব দ্য স্ট্রিট)। নায়েক বলেন, তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, বিশেষ করে যারা কেবল স্কুলজীবন শুরু করেছে। যাদের মা-বাবা দিন আনে দিন খায়, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন তিনি। নায়েকের শঙ্কা ছিল, এসব শিশু স্কুলে আসতে না পারলে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়বে। স্কুল বন্ধ থাকার সময় নায়েক শিশুদের গ্রামে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন। গবাদিপশু চরাতে দেখেছেন। এসব শিশুর পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন নায়েক। আর তাই তিনি হাতের কাছে যা আছে, তা দিয়েই শিশুদের লেখাপড়ায় ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। দূরত্ব বজায় রেখে শিশুদের বসানোর জন্য গ্রামের রাস্তা বেছে নেন। রাস্তার পাশে থাকা ঘরের দেয়ালগুলো বানিয়ে ফেলেন বোর্ড। নায়েকের বানানো এমন স্কুলেই করোনাকালে চলতে থাকে শিশুদের লেখাপড়া। নায়েকের এমন উদ্যোগ বুঝিয়ে দেয়, ইচ্ছা থাকলেই উপায় বের করা যায়। সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ না হওয়ায় নায়েকের এমন ভূমিকার জন্য তাঁকে ভালোবেসেছে গ্রামবাসীও। ভালোবেসে তাঁর নাম দিয়েছে পথশিক্ষক। গত মাসে ভারতে স্কুলগুলো খুলে যাওয়া শুরু হয়েছে। মহামারি বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা শিশুদের শিক্ষাজীবনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে স্কুলগুলো পুরোপুরি খুলে দিতে পরামর্শ দিয়েছেন।