টান টান উত্তেজনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টাইগারদের দুর্বার জয়

নাজমূল বরাত রনি ডেক্স প্রতিবেদনঃ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দেখাতেই জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সেমি-ফাইনালের আশা জিইয়ে রাখল সাকিব আল হাসানের বাহিনী। প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল টাইগাররা।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুর্বার জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। রবিবার (৩০ অক্টোবর) ১৫১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বাংলাদেশকে মোকাবিলায় ১৪৭/৮ (২০) রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে।নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটির পরও পুঁজিটা ছিল অল্প। তবে তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের আগুনে বোলিংয়ে দুর্দান্ত এক জয় ছিনিয়ে নিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে ৪ রানে হারিয়েছে টাইগাররা।

জয়টা অবশ্য হাতছাড়া হতে বসেছিল। কিন্তু বোলারদের দৃঢ়তায় সেটা সম্ভব হয়নি। তীরে এসে তরী ডুবিয়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। হাত ছোঁয়া দূরেই ছিল তারা। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৫ রান। কিন্তু মোসাদ্দেক হোসেন দুই উইকেট নিয়ে ১২ রান দিয়ে ব্যাপারটা ভালোভাবে সামাল দিয়ে টাইগারদের জয় নিশ্চিত করেন।
শেষ বলে জিম্বাবুয়ের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫ রান। বোলার মোসাদ্দেকে। ব্যাটার মুজারাবানি। ক্রিজ ছেড়ে ব্যাট চালান ব্যাটার। কিন্তু বল মিস করেন। উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান স্ট্যাম্পিং করে দিলেন। বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ দল।
উল্লাস শেষে বিজয়ী এবং পরাজিত দলের ক্রিকেটাররা একে অপরের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররাও মাঠ ছেড়ে উঠে যায়।

কিন্তু ছোট গল্পের মত ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’- বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের ম্যাচের শেষটা তখনও বাকি ছিল। মুজারাবানি আউট হয়েছেন কি না, থার্ড আম্পায়ারকে দেখতে বলেন ফিল্ড আম্পায়াররা। সেখানেই বাধে বিপত্তি। রিপ্লাইতে দেখা যায়, বল স্ট্যাম্পে আসার আগেই বল গ্লাভসে পুরে নেন নুরুল হাসান সোহান।

নিয়ম অনুযায়ী ব্যাটার তো নটআউটই থাকলেন, সঙ্গে বৈধ বল হয়ে গেলো ‘নো’ বল। খেলোয়াড়রা বাউন্ডারি লাইন পার হয়ে গেলো, উইকেট পরিচর্যার জন্য রোলার নিয়ে কর্মীরাও মাঠে প্রবেশ করে ফেলেছে। এ সময় সাইটস্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে উঠলো ‘নট আউট’ অ্যান্ড ‘নো বল’।

সুতরাং, বাংলাদেশ দলের ফিল্ডারদের সঙ্গে জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটারকে আবারও মাঠে নামতে হলো শেষ বল খেলার জন্য। একই সঙ্গে জিম্বাবুয়ে ইনিংসের সঙ্গে যোগ হলো এক রান। একই সেঙ্গ ফ্রি-হিট পেলো জিম্বাবুয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের সমর্থকদের স্বস্তি দিয়ে শেষ বলটিতে কোনো রান নেয়া থেকে মুজারাবানিকে বিরত রাখতে পারলেন মোসাদ্দেক। ৪ রানের জায়গায় বাংলাদেশ জিতলো তিন রানে।
সবচেয়ে বড় কথা, যে কোনোভাবেই হোক- বাংলাদেশ দল দু’বার বিজয়উল্লাস করলো এই ম্যাচে।

শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ১৬ রান। শেষ ওভার করার জন্য সাকিব আল হাসান বল তুলে দিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের হাতে। ব্যাট করছেন ব্রাড ইভান্স এবং রায়ান বার্ল। প্রথম বলে দিলেন ১ রান। দ্বিতীয় বলে ব্রাড ইভান্স ছক্কা হাঁকাতে গেলেন। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে বলটি তালুবন্দী করে নিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ৪ বলে প্রয়োজন পড়ে ১৫ রান।
তৃতীয় বলটি উইকেটরক্ষকের পেছন দিয়ে বাউন্ডারি মেরে দেন ব্রাড ইভান্স। চতুর্থ বলে দিলেন ছক্কা। ২ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন পড়ে ৫ রান। পঞ্চম বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে মিস করেন ইভান্স। বল ধরে স্ট্যাম্প ভেঙে দিতে মোটেও বিলম্ব করেননি নুরুল হাসান সোহান। ১ বলে প্রয়োজন ৫ রান। শেষ বলে নাটকীয়তা তৈরি হয়। যার ফলে ১ বলে প্রয়োজন হয় ৪ রান। কিন্তু আর কোনো রান নিতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।

ব্রিসবেনের দ্য গ্যাবায় স্নায়ুক্ষয়ী এই ম্যাচে বাংলাদেশের করা ১৫০ রানের জবাব দিতে নেমে ১৪৭ রানে থেমে যায় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ফলে ৩ রানে জিতে গেলো বাংলাদেশ।

এবারের বিশ্বকাপে দল হিসেবে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স যাই হোক, ব্যক্তি হিসেবে তাসকিন আহমেদ দুর্দান্ত। এখনও পর্যন্ত খেলা তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই প্রথম ওভারে উইকেট নেয়ার নজির গড়লেন তিনি। প্রথম ম্যাচে তো প্রথম দুই বলেই উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিন আফ্রিকার টেম্বা বাভুমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন প্রথম ওভারে।