কবি সাংবাদিক লেখক ও টিভি ব্যক্তিত্ব
» কামরুল হাসান বাদল
আমাদের বাড়িটা তোমার অভাবে
খাঁ খাঁ করছে জনক
এ বাড়িতে আর কখনো
ক্রীতদাসের মেলা হবে না।
তুমি আসবে বলে নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তোরণ আর সজ্জিত উদ্যান
এখন শকুনিদের কফিখানা
সেখানে আর জীবনের সঙ্গীত গীত হয় না।
তুমি একদিন যে ক্রীতদাসদের
মুক্তির জন্য খুলে দিয়েছিলে অর্গল
তারা এখন স্বেচ্ছায় বন্দিশিবিরের রিলিফের জন্য প্রত্যুষ হতে প্রদোষ অবধি
দণ্ডায়মান
গ্লানি আর লজ্জার থালা হাতে।
পিতা,
আমার পরিচয়ের জনক,
৫৬ হাজার বর্গমাইলের
এ অনার্য তামাটে জাতির মুক্তির জনক,
তোমার অভাবে
আমাদের পুষ্টিহীন শস্যদানা
শূন্য বাথান
আর মরুময় পদ্মার চরে কদাচিৎ আজ বৃষ্টির জুঁইফুল।
তুমি নেই তাই আজ খসে পড়ে নজরুলের
ঝাঁকড়া চুল
তুমি নেই তাই আজ খসে পড়ে রবীন্দ্রনাথের
সৌম্য মূর্তি
তুমি নেই তাই সেতারের তারগুলো বেজে ওঠে না
টুংটাং-
তাই তুমিহীন কবিতাহীন প্রতিদিন
তাই তুমিহীন সঙ্গীতহীন প্রতিদিন
তাই তুমিহীন জীবনহীন প্রতিদিন।
আজ আর বাগানে ফুল ফোটে না তো
পাখিরা আর গায় না তো গান
নদীর জোয়ারে আর ভাসে না তো উজ্জ্বল মাছরাঙা।
এই নদী এই কলতান
এই পাখি এই বৃক্ষ
এই পুষ্প এই কবিতা
তুমিহীনতায় উদ্দেশ্যহীন।
পিতা,
আমাদের অস্তিত্বের জনক,
আমাদের এক আঁজলা হেমলক দাও
আমরা বিনাশ করি
আমাদের সকল অসুন্দর-কুৎসিত
অন্তত একবার তোমার যোগ্য হয়ে উঠি।
আর একবার অন্তত জেগে উঠুক এ জনপদের মানুষ বত্রিশ নম্বরে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
আর বিমানবন্দরে, সর্বত্র মানুষের ভেতর
জেগে উঠুক সাতই মার্চ
জেগে উঠুক বাঙালির শ্রেষ্ঠতম কবিতা
‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’।
হে কবি,
হে বন্ধু আমার,
আমাদের ভিতর আবার জাগ্রত করো সুন্দর
আমাদের শিকড় তুমি প্রোথিত করো
পদ্মা-মেঘনা-যমুনার বদ্বীপে।
আমরা যেন জেগে উঠি আবার-
যেমন বায়ান্নতে,
আমরা যেন জেগে উঠি আবার-
যেমন ছিষট্টিতে,
আমরা যেন জেগে উঠি আবার-
যেমন উনসত্তরে,
আমরা যেন জেগে উঠি আবার-
যেমন একাত্তরে।
তুমি নেই আর আমরা
আশ্রমে লালিত মৌন শিশু,
তুমি নেই আর আমরা
পাতা খসেপড়া এক ক্ষীণকায় বৃক্ষ
তুমি নেই আর আমরা
পরস্পর বিচ্ছিন্ন।
পিতা,
জাতির জনক আমার,
আমার নিহত নিষ্পাপ মায়ের নামে বলছি-
আমার অনুজ রাসেলের নামে বলছি-
আমার সহোদর কামাল, জামাল
আর তাদের
নবপরিণীতা আমার ভগ্নিদের নামে বলছি-
আমি সে মধ্যরাতের সকল
শহীদের নামে বলছি-
এ পাপের ভার আমরা নেব না
এ লজ্জার ভার আমরা নেব না
এ গ্লানির ভার আমরা নেব না।
আমরা কেন বলব না-
ঘাতক তুমি যেদিন হত্যা করেছ আমার পিতাকে সেদিন আমাদের পতাকা হতে
মুখ থুবরে পড়েছে বিশ্বের শান্তির কপোত
আর আমাদের কপালে এঁকে দিয়েছো
পরাজয়ের উল্কি।
আমাদের বিজয়কে গ্লানিতে
আমাদের আনন্দকে বিষাদে
আমাদের উৎসবকে শোকে পরিণত করেছ ঘাতক
তুমি দাঁড়াও
কথা আছে-
আমার পিতা শুয়ে আছে টুঙ্গীপাড়ায়
কিন্তু আমরা তো বেঁচে আছি এই জনপদে
তাঁর অবিনশ্বর পথে
লোহিত কণিকার অববাহিকায়।
(রচনাকাল- মার্চ, ১৯৮৯।
বিশ্বের সবচেয়ে সাহসী, আপোসহীন, আত্মনিবেদিত জননেতা। সবচেয়ে স্টাইলিশ রাষ্ট্রনায়ক, বামুন বাঙালির শালপ্রাংশু নেতা, জাতির পিতা লও সালাম।
শুভ জন্মদিন।
১৭ মার্চ, ২০২৩