চট্টগ্রাম অঞ্চলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ‘ব্রতের ভাত’অনুষ্ঠান

সংগঠক লেখক তপন সেন গুপ্ত ডেক্স প্রতিবেদনঃ আশ্বিন মাসের শেষদিন ও কার্তিক মাসের প্রথম দিন ঘিরে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রচলিত আছে এমন এক পার্বনের, যার নাম জলবিষুব সংক্রান্তি।জলবিষুব সংক্রান্তি উপলক্ষে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সনাতন ধর্মাবলম্বী বা হিন্দুদের মধ্যে ‘ব্রতের ভাত’ নামে তিন দিনের একটি লৌকিক পার্বণ পালনের রেওয়াজ রয়েছে। এই অনুষ্ঠানে আশ্বিনের শেষ দিন রাতে ভাত রান্না করা হয়।শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) এই পার্বন উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা করছেন অশ্বিনী কুমারের ব্রত। এই ব্রত ‘ব্রতের ভাতের পূজা’ নামেও পরিচিত।এই পার্বণের উৎপত্তি সম্পর্কে সংগঠক লেখক তপন সেন গুপ্ত জানান আশ্বিনের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় পূজার্চনা। আর পরের দিন অর্থাৎ কার্তিক মাসের প্রথম সকালে সেই ভাত নারিকেলের পুর, কলা ও তিলের লাড্ডুসহ নানা মিষ্টিজাত উপকরণ দিয়ে খাওয়া হয়। ‘ব্রতের ভাত’ নিয়ে এই অঞ্চলের লোকসমাজে একটি মিথ রয়েছে- নিয়ত করে ব্রতের ভাত খেলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। ‘আশ্বিনে রাঁধে কার্তিকে খায়, যে বর মাগে সে বর পায়।’ চট্টগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে এই ‘ব্রতের ভাত’ অনুষ্ঠানটি পালিত হলেও অন্য ধর্মাবলম্বীদের অনেকে সাগ্রহে এই ব্রতের ভাত গ্রহণ করে থাকেন।ব্রতের ভাত’ পার্বণ উপলক্ষে কয়েকদিন নগরের বিভিন্ন বাজার ও গলির মোড়গুলোতে বিক্রেতারা নারিকেল, কলা, তিল ও গুড়সহ পার্বণ সংশ্লিষ্ট নানা দ্রব্যের পসরা সাজিয়ে বসেন।চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সময়টাতে ১৩/২১ বেজোড় সংখ্যার চাল-ডাল, শাপলার ডগা, কাচা কলা, পেঁপে ও নানান সবজি মিলিয়ে রান্না করা হয়। মোমবাতি বা কুপির আলোকশিখার ওপর কলাপাতা রেখে দেওয়া হয়। সকালে কলাপাতায় জমে থাকা কালি ছোটদের কপালে টিপ আকারে লাগিয়ে দেওয়া হতো, যেন কারও খারাপ দৃষ্টি না পড়ে। কালক্রমে এসব সংস্কৃতি এখন বিলুপ্তির পথে।

ব্রতের ভাত রান্না ও পূজার ক্ষণ সম্পর্কে বলেন, মহাদেব ও অশ্বিনী কুমারের পূজার পর পহেলা কার্তিক সবাই ব্রতের ভাত গ্রহণ করেন।আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের প্রবক্তা অশ্বিনী কুমার ও রেবন্ত কুমার দুই যমজ ভাই জন্মেছিলেন ঘোড়ার মাথা নিয়ে। তাদের পিতামাতা ছিলেন সূর্যদেব ও সংজ্ঞা। ঘোড়ার মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করায় তাদের মা সন্তানের সুস্থ, সুন্দর দেহ ফিরে পাওয়ার আশায় গেলেন মহাদেবের কাছে। মহাদেব এই সমস্যা সমাধানের জন্য সূর্যদেব ও সংজ্ঞাকে পাঠালেন দেবী পার্বতীর কাছে। পার্বতীর কাছে গিয়ে সূর্যদেব ও সংজ্ঞা সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন এবং দুই সন্তানকে মানুষে রূপান্তরের জন্য প্রার্থনা জানান। দেবী পার্বতী সংজ্ঞাকে এক মুঠ চাল দিয়ে বলেনÑ আশ্বিন মাসের শেষ দিবসের আগের রাতে এই চাল ভক্তিপূর্বক রান্না শেষে মহাদেবের অর্চনা করতে হবে এবং কার্তিক মাসের প্রথম দিবসে সেই অন্ন খেলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে। দেবীর আজ্ঞা মতে সংজ্ঞা তাই করেছিলেন এবং দুই সন্তান মানুষরূপ লাভ করেছিলেন। সেই বিশ্বাস থেকেই মূলক ব্রতের ভাতের প্রচলন।