করবী ফুল

স্বর্ণালী প্রিয়া ডেক্স প্রতিবেদনঃ করবী একটি লাল গোলাপী বা সাদা ফুলবিশিষ্ট চিরহরিৎ গুল্ম।গোলাপী রঙের করবী ফুলকে রক্তকরবী বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Nerium oleander বা Nerium indicum,ইংরাজি নাম: Oleander, Adelfa, adre, Espirradeira, Laurel rosa, Laurier rose, Olean etc.সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে করবী ফুলের গুরুত্ব অনেক। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই ফুল ব্যবহৃত হয়। করবী ফুলের বিভিন্ন নাম বর্তমান। যেমন শ্বেত করবী, রক্ত করবী, কলকে ইত্যাদি।
এতে করবী ভূমধ্যসাগরীয় ও এশীয় প্রজাতি। এরা ২-২.৫ মিটার উঁচু। এরা চিরসবুজ গাছ। গোড়া থেকে অনেকগুলো ডাল ঝোপের মত গজায়। পাতা ডালের আগার দিকে বেশি।গ্রীষ্ম,বর্ষা ও বসন্তে করবী ফুলের মরসুম। তবে আজকাল অন্য সময়েও এই ফুল ফুটতে দেখা যায়। গোলাপী রঙের ফুলগুলি যখন গাছে হয়ে থাকে থোকা থোকা অবস্থায়।বিভিন্ন রংয়ের করবী ফুল দেখা যায়। যেমন-সাদা,গোলাপী,হলুদ,ফিকে লাল ইত্যাদী।কলমে চাষ, ছাঁটা নিষ্প্রয়োজন। এদের বীজ বিষাক্ত।
করবী ফুলের আদি বাসস্থান দক্ষিন আমেরিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আবার কারো মতে করবী ফুলের আদি নিবাস ভারত উপমহাদেশ। বর্তমানে এটি থাইল্যান্ড,চীন, বাংলাদেশ, ভারত,মালয়েশিয়া সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিস্তির্ণ এলাকা, ইউরোপ ও কিন্তু গাছটির সর্বঙ্গ তীব্র বিষযুক্ত। একটি মাত্র পাতা খেলেই মানুষের, বিশেষত শিশুর মৃত্যু হতে পারে। পাতা তেতো বলে মানুষের ক্ষেত্রে বিষক্রিয়া কম দেখা যায়, অবশ্য TESS (Toxic Exposure Surveillance System) অনুসারে ২০০২ সালে আমেরিকায় ৮৪৭টি বিষক্রিয়ার ঘটনা লক্ষিত হয়। ঘাসে মেশা শুকনো করবী পাতা বা শাখা খেয়ে গবাদি পশুতে (বিশেষত ঘোড়ার) বিষক্রিয়া/মৃত্যু দেখা যায়- পূর্ণবয়স্ক ঘোড়ার মারাত্মক মাত্রা ১০০g, (০.৫ mg/Kg)।
করবীর ফুলের ১২ টি বৈশিষ্ট্য :
১এটি একটি চিরহরিৎ জাতীয় গুল্ম।
২.এর পাতা সরু ও লম্বাটে।
৩,করবীর ফুল বাইরের দিকে ফোটে। প্রান্তিক ও ঘন।
৪.কামিনীর ফুল সুগন্ধীযুক্ত।
৫এর ফুলে মধু থাকে।
৬এর ফল ডিম্বাকার ও বিষাক্ত।
৭এর পাতা সরু ও লম্বাটে।
৮.গাছটির সর্বঙ্গ তীব্র বিষযুক্ত।
৯.শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে ফুল ধরে।
১০,ফল শাঁসযুক্ত হয়।
১১,ফল কাঁচা সবুজ, পাকলে ধূসর রঙের হয়।
১২.সাধারণত ফুল সতেজ থাকে ৪-৫ দিন পর্যন্ত।
করবী ফুল টবে,বাড়ির উঠান,বাগান,বারান্দায় ইদ্যাদি জায়গায় সাজালে সেখানকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
বংশবিস্তার পদ্ধতি:করবী ফুল দুই প্রকার পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করা সম্ভব।
বীজ থেকে বংশবিস্তার করা সম্ভব।
গুটি কলম পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করা যায়।
করবী গাছের চাষের জন্য খুব বেশী নয় এমন আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি যাতে বেশী ভিজে কাদা কাদা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর কোনো কারণে মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকলে সেই কয়দিন জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। হাল্কা ছায়া করবীর জন্য উপযোগী। মাটি শুকনো হলে ভাল।করবী ফুল চাষের জন্য বড় উচ্চতার টব হলে ভাল হয়।
সার মাটি.. ভাল বৃদ্ধির জন্য ভারী দোঁয়াশ মাটি হলে ভাল হয়। আপনি যদি টবে করবী ফুল গাছ চাষ করতে চান তাহলে প্রথমেই যেটি করবেন, পরিমান মতো দো-আঁশ বা বেলে মাটি, এর সাথে পরিমান মতো ব্যালিমিন, কম্পোস্ট, একমুঠো হাঁড়ের গুঁড়ো, দু’মুঠো ছাই মিশিয়ে নিন। এতে টবের মাটি ভাল থাকবে। এর সঙ্গে কিছুটা পরিমান পাতা পচা সার, গোবর, খৈল মিশিয়ে মাটি তৈরি করলে ভাল হয়।
সার.. গোবর সার, চাপান সার এই গাছের জন্য ভাল। নিমের গুড়ো খোল, কাঠের ভষ্ম, গুঁড়ো হাড়, ও গোবর সার মিশিয়ে তৈরী করুণ চাপান সার। বর্ষাকালে সার দিতে হবে।
করবীর ঔষধি গুনঃ
করবীর মুলের ছাল অকালে চুল পাকা কমাতে সাহায্য করে।
এটি বাত-প্রশমক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
করবীর মূল নারিকেল তেলের সাথে মাখলে খোস-পাঁচড়া কমে।
শ্বেতী, ক্ষত, অর্শ রোগে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
করবীর মুলের ছাল ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
এর মূল ও গাছের ছাল চক্ষুপীড়া, জ্বর প্রতিরোধে কর্যকর।
চর্মরোগ নিবারক এটি ব্যবহৃত হয়।
পরিচর্যা
এই গাছে সাধারণত প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। তবে বেশি ফোটে বসন্ত ও গ্রীষ্ম ঋতুতে। সার হিসেবে চাপান সার বা গোবরসার দিতে হবে। করবী গাছে জল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গোড়ায় জল না জমে। মাসে দুবার মাটি খুঁচিয়ে দিতে হবে। করবী ফুল গাছে রোগ বা পোকার আক্রমণ খুব কম ও বেশি পরিচর্যাও করা লাগে না।
ডাল ও শিকর ছাঁটাই
একটি সতেজ গাছ তৈরির প্রক্রিয়াটি হল গাছটি বড় হলে ডালের অনেকটা ছেটে দিতে হবে। শীতের শেষে ডাল ছাঁটাই করতে হয়। ছাঁটাই এর পরে চাউবান্টিয়া পেন্ট ব্যবহার করুন। আর শিকরের ক্ষেত্রে এক বছর অন্তর ছাঁটতে হয়। এর জন্য টব থেকে মাটি সমেত গাছ বের করে শিকড় ছেঁটে কাটা জায়গায় বোর্দোপেস্ট লাগিয়ে আবার মাটি সমেত গাছ টবে ঢুকিয়ে দিতে হবে।