সরকারিভাবে দেশে এই মুহুর্তে ৯০০ টন অক্সিজেন মজুদ আছে বলে জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৃহষ্পতিবার অন-লাইন জুম অ্যাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল এসোসিয়েশন আয়োজিত “কোভিড-এর ২য় ঢেউ মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি প্রস্ততি ও জরুরি অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা” বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভারতের মত আমাদের দেশে যাতে অক্সিজেন সংকট না হয়, সেজন্য সরকারিভাবে আপদকালীন সময়ের জন্য এই মুহুর্তে দেশে প্রায় ৯০০ টন অক্সিজেন মজুদ রাখা হয়েছে। এর সাথে দেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে আরো ৪৫০ টন অক্সিজেন মজুদ রয়েছে।
জাহিদ মালেক জানান, ‘দেশে বর্তমানে সাধারণ ও কোভিড রোগী মিলে ৭০-৮০ টন অক্সিজেন প্রয়োজন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-এর পিক-এর সময় সর্বোচ্চ অক্সিজেন চাহিদা ছিল ২১০ টন পর্যন্ত। এই মুহুর্তে দেশে দৈনিক অক্সিজেন উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টন।’
তিনি বলেন, আগামী মাসে একটি বেসরকারি সংস্থা ৪০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করবে। জুলাই মাসে অন্য একটি বেসরকারি সংস্থা আরো ৪০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করবে। এর ফলে, দেশে কোভিডকালীন ৩য় ঢেউ-এর মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে তা মোকাবেলা করতে কোন সমস্যা হবে না।
কোভিডে আক্রান্তের মাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন হলে এবং মানুষ অস্বাভাবিকভাবে আক্রান্ত হলে শুধু সেক্ষেত্রেই বড় রকম সমস্যা হতে পারে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, দেশের মানুষ সরকারের জরুরি নির্দেশনাগুলি মেনে চললে এবং আসন্ন ঈদ সামনে রেখে মানুষ বেপরোয়া চলাফেরা, কেনাকাটা, ভ্রমণ না করলে আশা করা যায় করোনার ৩য় ঢেউ দেশে এলেও বাংলাদেশ ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।
বর্তমানে দেশের হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা চিকিৎসায় রোগীর খারাপ অবস্থা হলে তখন অক্সিজেন মূল ভূমিকা পালন করে। একারণে অতি দ্রুত দেশের সরকারি ১৩০টি হাসপাতালে এখন সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই ১৩০টি হাসপাতালের মাধ্যমে এখন প্রায় ১৬ হাজার শয্যায় অক্সিজেন বেড কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশনের ১০০টি আইসিইউ বেডে মানুষ এখন কোভিড চিকিৎসা নিচ্ছে। খুব শীঘ্রই সেখানে আরো ১০০টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা হচ্ছে। এই উদ্যোগগুলি দেশে কোভিড চিকিৎসায় বিরাট অবদান রাখবে।
ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ভারতের সেরাম কোম্পানীর সাথে আমাদের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের চুক্তি থাকলেও সে দেশের বর্তমান ভয়াবহ অবস্থার কারণে চুক্তি অনুযায়ী সব ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে, ভ্যাকসিন নিতে রাশিয়ার সাথে সরকারের কথা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। রাশিয়ার সাথে শীঘ্রই চুক্তি হবে আমাদের। পাশাপাশি, চীন ১২ মে’র মধ্যে ৫ লাখ ভ্যাকসিন দিচ্ছে। চীন সরকারের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। দ্রুতই চীনের ভ্যাকসিন নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত চলে আসবে। একই সাথে, অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিন ভারত ছাড়া বিশ্বের অন্য যে দেশগুলি উৎপাদন করছে আমরা সেই দেশগুলির সাথেও যোগাযোগ করছি। সব মিলিয়ে আশা করা যায়, খুব দ্রুতই ভ্যাকসিন সংকট কেটে যাবে।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি মুবিন খানের সভাপতিত্বে সভায় ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের মহাসচিব আনোয়ার হোসেন খান এমপি, স্বাচিপ-এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিপু মিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।