আজ ২৫ শে বৈশাখ,বিশ্বকবির ১৫৯তম জন্মবার্ষিকীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

এস,আহমেদ ডেক্স প্রতিবেদনঃ দ্বারে আসি দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ আজ ,বাংলার মাটি আর মানুষের অন্তরে ছড়িয়ে আছে যার অপার সৃষ্টি সম্ভার. বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সঙ্গীতের কিংবদন্তি পুরুষ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন আজ। সার্বজনীন এই কবি বাংলাভাষা সাহিত্যকে নিয়ে গেছেন বিশ্ব দরবারে। তাইতো নাগরিক মধ্যবিত্ত মননে আজও বাজে কবির অনিন্দ্যসুন্দর সব গান। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ ২৫শে বৈশাখ। আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯তম জয়ন্তী।বিশ্বকবির রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। পৃথিবী আজ ধুঁকছে মহামারী করোনায়। এই সময়ে কবিগুরুর গান, কবিতা, সাহিত্য মানুষের মনে সাহস জোগায়, মনকে শান্ত করে।

রবিঠাকুর বাঙালির মানসপটে সদাই বিরাজমান। বাঙালির জীবনের যত ভাবনা, বৈচিত্র্য আছে, তার পুরোটাই লেখনী, সুর আর কাব্যে তুলে ধরেছেন কবিগুরু।

তার সাহিত্যকর্ম, সঙ্গীত, জীবনদর্শন, মানবতা, ভাবনা- সবকিছুই সত্যিকারের বাঙালি হতে অনুপ্রেরণা দেয়। কবিগুরুর ১৫৯তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার সরকারি পর্যায়ে কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না। এছাড়া ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিকভাবেও মঞ্চে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে না। তবে ছায়ানটসহ বিভিন্ন সংগঠন তাদের ইউটিউব চ্যানেলে রবীন্দ্রস্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে এক ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠান যা চ্যানেলগুলোতে প্রচারের জন্য বলা হয়েছে।
১৮৬১ সালের এই দিনে তিনি জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে নিয়ে বয়ানের কি আসলে শেষ আছে? তাঁকে নিয়ে বয়ানের কি আসলে শেষ আছে? শুধু এটুকুই বলা যায় যে তিনি আক্ষরিক অর্থেই বিশ্ব কবি। বিশ্বের অসংখ্য ভাষায় তাঁর সৃষ্টি অনূদিত হয়েছে এবং স্থান করে নিয়েছে পাঠকের মনে। একাধারে তিনি বাংলার দিকপাল কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক। তিনি গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি নামে নন্দিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে রবীন্দ্রনাথ এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন এই অসাধারণ প্রতিভাবান মানুষটি। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনি। নোবেল ফাউন্ডেশন তাঁর এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি “গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ” রূপে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭–১৯০৫) এবং মাতা ছিলেন সারদাসুন্দরী দেবী (১৮২৬–১৮৭৫)… তিনি ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল ব্রাহ্ম আদিধর্ম মতবাদের প্রবক্তা। রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষেরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলা পিঠাভোগে বাস করতেন। ১৮৭৫ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ ঘটে। পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অতিবাহিত করতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তাঁর “অভিলাষ” কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য, যদিও পড়াশোনা সম্পূর্ণ না করেই দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর (২৪ অগ্রহায়ণ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ) ঠাকুরবাড়ির অধস্তন কর্মচারী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী । রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনীর সন্তান ছিলেন পাঁচ জন: মাধুরীলতা , রথীন্দ্রনাথ, রেণুকা , মীরা এবং শমীন্দ্রনাথ । এঁদের মধ্যে অতি অল্প বয়সেই রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘটে। সন্তানের মৃত্যুশোক তাঁকে সহ্য করতে হয়েছিল, নিঃসন্দেহেই তিনি একজন দুঃখী পিতা ছিলেন। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্��ের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তাঁর পত্নীবিয়োগ হয়। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তাঁর মৃত্যু হয়। পারিবারিক শিক্ষা, শিলাইদহের জীবন এবং প্রচুর ভ্রমণ তাকে প্রথাবিরুদ্ধ এবং প্রয়োগবাদী হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। তিনি ব্রিটিশ রাজের প্রবল বিরোধিতা করেন এবং মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করেন। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। বঙ্গীয় সাহিত্যের আধুনিকীকরণে তিনি ধ্রুপদি ভারতীয় রূপকল্পের কঠোরতাকে ও দুর্বোধ্যতাকে বর্জন করেন। নানান রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিষয়কে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে তাঁর উপন্যাস, ছোটোগল্প, সংগীত, নৃত্যনাট্য, পত্রসাহিত্য ও প্রবন্ধসমূহ। তাঁর বহুপরিচিত গ্রন্থগুলির অন্যতম হল গীতাঞ্জলি, গোরা, ঘরে বাইরে, রক্তকরবী, শেষের কবিতা ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথের কাব্য, ছোটোগল্প ও উপন্যাস গীতিধর্মিতা, সহজবোধ্যতা, ধ্যানগম্ভীর প্রকৃতিবাদ ও দার্শনিক চিন্তাধারার জন্য প্রসিদ্ধ। তাঁর রচিত অমর সৃষ্টি আমার সোনার বাংলা ও জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে যথাক্রমে বাংলাদেশ ও ভারত রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত। পৃথিবীর অনেক দেশ তাঁর মুখাকৃতি দিয়ে ডাক টিকেট ছাপিয়েছেন। যে দেশ গুলো তাঁর মুখাকৃতি দিয়ে ডাক টিকেট ছঁপিয়েছেন তার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, বুলেগরিয়া, ইয়েমেন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভেনেজুয়েলা, রোমানিয়া, রাশিয়া, সুইডেন, ভিয়েতনাম উল্লেখ যোগ্য। এছাড়াও আফ্রিকান সাগরের একটি আগ্নেয়দ্বীপ কোমোরো আইল্যান্ড থেকে ১৯৭৭ সালে পৃথিবীর সব ডাকসাইটেদের নিয়ে একটি ডাকটিকেট প্রকাশ করেছিল। আর এই ডাকসাইটেদের একজন হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার আবক্ষ মূর্তি বানিয়েছেন আধুনিক শিল্পকলার মহিরুহদের একজন স্যার জেকব এপস্টাইন, তাঁর কবিতা ইরেজিতে অনুবাদ করেছেন পৃথিবী বিখ্যাত আইরিশ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস্, ফরাশি কবি আঁদ্রে জিদ ও সাঁ জঁ পার্স, স্প্যনিস কবি হুয়ান রামোন, হিমেনেথ কিংবা রুশ কবি ও কথা সাহিত্যিক বরি পাস্তেরনাক। ১৯১৩ সালে বাংলা সাহিত্যর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার অমর কীর্তি গীতাঞ্জলীর জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। আর অনন্ত কালের জন্য অমর করে রেখে যান বাংলা ভাষাকে বিশ্ব সংস্কৃতির দরবারে। একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাই বাংলা ভাষাকে কয়েক শত বছর সামনে এগিয়ে দিয়ে গিয়েছেন নিঃসন্দেহে।