কলাবতী ফুল

স্বর্ণালী প্রিয়া ডেক্স প্রতিবেদনঃ কলাবতী বর্ষার এক অনন্য ফুল।বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাসে এ ফুল বেশি ফুটতে দেখা যায়। এই ফুলের নাম, কলাবতী বা সর্বজয়া। পাতার অগ্রভাগ হলুদের পাতার মতো সূচালো। বৈজয়ন্তী ইংরেজি নাম : saka siri, Indian shot, canna, bandera, chancle, coyol, platanillo বৈজ্ঞানিক নাম : Canna indica. জগতের বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ কলাবতী’র আদি নিবাস আমেরিকার ক্রান্তীয় অঞ্চল ও ক্যারিবীয় এলাকা হলেও এটি এখন বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এশিয়া মহাদেশের জনপ্রিয় ফুলগুলোর মধ্যে কলাবতী একটি। অনেকে এ ফুলকে বৈজয়ন্তী অথবা সর্বজয়া নামে চেনেন। বহুবর্ষজীবী একবীজ পত্রী এ উদ্ভিদ স্যাঁতসেতে জায়গাসহ যে কোন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে।

কলাবতী ফুলের ৫ টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
১.ফুল গন্ধহীন, পাপড়ি বড়, নমনীয় কোমল,
২.গাছের কাণ্ডের অগ্রভাগে ফুল ধরে
৩. একই গাছে একত্রে এক বা একাধিক ফুল ফোটে।
৪.পাতার গড়ন অনেকটা কলাপাতা কিংবা হলুদ বা শটি পাতার মতো।
৫.কলাবতী টবেও চাষযোগ্য।

এতে সৌন্দর্য বর্ধনে উদ্যান, সড়কের পাশে অথবা সড়ক বিভাজকে, বাসাবাড়িতে মানুষ কলাবতীর কন্দ বা চারা লাগিয়ে থাকেন। এমনকি গ্রামাঞ্চলের ঝোঁপ ঝাড় ও পরিত্যক্ত ভূমিতেও দেখা মেলে গন্ধহীন বিভিন্ন প্রজাতির কলাবতী ফুলের।কলাবতী ফুলের সাদা, ক্রিম সাদা, কাল, কমলা, লাল, হলুদ ও লাল-হলুদের মিশ্র রঙ সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাতার আকৃতি কলা পাতার মতো হওয়ায় এ উদ্ভিদের নাম হয়েছে কলাবতী। দীর্ঘস্থায়ী এ উদ্ভিদের কন্দ বা চারা একবার রোপণ করা হলে বংশ বিস্তারের মাধ্যমে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং তা ক্রমশই ঝোপাকৃতি ধারণ করে। হালকা ছায়া যুক্ত ভেজা ও স্যাঁতসেতে মাটিতে কলাবতী ফুল গাছ স্বাচ্ছন্দে বের উঠতে পারে। এর জন্য খুব একটা পরিচর্যার প্রয়োজন পরে না।

জাত ভেদে কলাবতী গাছ উচ্চতায় ৩০ সেন্টিমিটার থেকে প্রায় দুই মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সবুজ রঙের মসৃণ কান্ড বিশিষ্ট কলাবতীর উপবৃত্তাকার পাতা প্রায় অর্ধ মিটারের মতো লম্বা এবং ৩০ সেন্টিমিটারের মতো চওড়া হয়ে থাকে। ফুল ফোটার সময় গাছ থেকে ডাটি বের হয় এবং এর উপরাংশে গুচ্ছাকারে ফুল ফোটে। ফুলের ডাটিগুলো কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে দুই তিন দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। ফুল থেকে ফল হয়। পরিণত বাদামী বর্ণের ফল ফেটে গোলাকার বা ডিম্বাকার বীজ বেড়িয়ে পরে। কন্দ ও বীজের মাধ্যমে এ উদ্ভিদ বংশ বিস্তার করে থাকে। অসময়ে গাছ মরে শুকিয়ে গেলেও আদা বা ওলের মতো কন্দ মাটির নিচে সতেজ থেকে যায় পরে সেখান থেকে আবার নতুন গাছের জন্ম হয়। কলাবতী ফুল থেকে যে বীজ হয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে তা অতি পবিত্র। এ বিশ্বাস থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কলাবতীর বীজ থেকে তৈরি রুদ্রাক্ষীর মালা গলায় পরে থাকেন।

আজকাল মানুষ টবে ও কলাবতী চাষ করছে। ব্যথা নিরাময় ও ঘা শুকাতে কলাবতীর বীজের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু কলাবতী চাষের উপযোগি হওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কলাবতী উদ্ভিদের চাষ হচ্ছে।