নৌযান চলাচল বন্ধ, তিন নম্বর সতর্ক সংকেত, বাংলাদেশ ও ভারতে জলস্বাস

নৌযান চলাচল বন্ধ, তিন নম্বর সতর্ক সংকেত, জলস্বাসের সম্ভাবনা
কলকাতা থেকে সঞ্চিতা সেন গুপ্তা ও জাকেরুল ইসলাম ডেক্সঃ মঙ্গলবার ২৫ মে ১০জ্যৈষ্ঠ – ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে সারাদেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে ।ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাবে সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘আকাশ গুমোট আকার ধারণ করার পাশাপাশি মাঝে মাঝে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে’র প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে জলস্বাসে ডুবছে শত শত গ্রাম ।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হয়। আর সন্ধ্যা নাগাদ সেটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ রয়েছে ঘণ্টায় ৬৪ কিলোমিটার। আগে মনে করা হচ্ছিল যে ঘূর্ণিঝড়টি উড়িষ্যার পারাদ্বীপ থেকে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যে আছড়ে পড়বে, কিন্তু এখন নির্দিষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে উড়িষ্যার বালেশ্বর শহর থেকে ধামরা বন্দরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে আছড়ে পড়বে। ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তর বলছে ওই রাজ্যের ভদ্রক জেলার চাঁদবালিতেই সবথেকে বেশি ক্ষতি করবে এই ঘূর্ণিঝড় ।বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তটে আছড়ে পড়ার সময়ে ওই অঞ্চলে গতি নিয়ে উপকূলের দিকে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এটি কয়েক ঘণটার মধ্যে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। তখন বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৬৫ থেকে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। উপকূল থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আর মাত্র ৪৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনি, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলগুলোয় স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার ফিট বেশি উচ্চতার পানিতে প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ইতিমধ্যেই উড়িষ্যা আর পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাগুলিতে চূড়ান্ত স্তরের ”লাল সতর্কতা” জারি করা হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকাগুলি থেকে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতে।

কলকাতা থেকে সঞ্চিতা সেন গুপ্তা জানান মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত উড়িষ্যার সাতটি জেলার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষকে এবং পশ্চিমবঙ্গের ১৪টি জেলার আট লাখেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলি থেকে সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে দুই রাজ্যের প্রশাসন জানিয়েছে।দুই রাজ্যের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সেনা, নৌবাহিনী আর উপকূল রক্ষী বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেওয়া এবং উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য।

উড়িষ্যার যে অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে প্রবল ঝড়বাতাস সহ বৃষ্টিতে আছড়িয়ে পড়তে চলেছে, পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতেও তার প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সবথেকে বেশি প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার। এছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম সহ দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া আর ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সমুদ্রের একেবারে পাশের গ্রাম বগুড়ান জলপাইয়ের বাসিন্দা জানাান, “সকাল থেকেই সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে। খুব জোরে হাওয়া বইছে। আকাশ মেঘলা। আমাদের গ্রামে মোটামুটি সবাই কাঁচা বাড়ির চাল শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছি। আশ্রয় শিবিরগুলিতে চলে যেতে শুরু করেছেন অনেকে। আজ রাত বা কাল ভোরের মধ্যে সবাই কোনও না কোনও আশ্রয় শিবিরে চলে যাবে বলে মনে হচ্ছে।”কলকাতার জন্য আলাদা একটি সংযুক্ত কমান্ড সেন্টার তৈরি হয়েছে – যেখানে পুলিশ, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা, কলকাতা টেলিফোন, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, পৌরসভার প্রতিনিধিরা থাকছেন। বেশ কয়েকটি নম্বর দেওয়া হয়েছে – যাতে নাগরিকরা বিপর্যয় সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা এই কমান্ড সেন্টারে জানাতে পারেন।

এছাড়া কলকাতা কর্পোরেশনের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডেও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বৈঠক শেষ হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।