’ সিআরবি রক্ষায় দিনে দিনে সামাজিক আন্দোলন জোরদার হচ্ছে »

চট্টগ্রাম নগরীর’ সিআরবি রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন দিনে দিনে জোরদার হচ্ছে আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সিআরবির সাত রাস্তার মোড়ে সকাল থেকে বিভিন্ন সংগঠন সমাবেশ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ উদ্যাগের প্রতিবাদ জানায়। বিকেল ৪টায় সিআরবির সাতরাস্তা মোড়ে ‘সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি বাঁচতে হবে’ শিরোনামে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম। একই সময়ে সিআরবি চত্বরে প্রকৃতিবাদী সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালন করে চট্টগ্রামের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক স্কোয়াড। এক প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি থেকে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে রাজনৈতিক, সাামজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন অংশ নেন। এবং সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ। একইসঙ্গে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ও গুজবের ফাঁদে পা না দিয়ে চট্টগ্রামের তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানিয়েছেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন,সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত , খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, পরিবেশবিদ ইদ্রিস আলী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. ইউনুস, কবি,সাংবাদিক লেখক টিভি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামরুল হাসান বাদল,চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ,চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী প্রণব চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদের মহাসচিব মো. ইউনূস, জেলা সিপিবির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নুরুচ্ছফা ভূঁইয়া, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব কাজী মহসিন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ,আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, নাট্যজন সাইফুল আলম বাবু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, সাংবাদিক নাজিমউদ্দিন শ্যামল, আসিফ সিরাজ ও ঋত্বিক নয়ন, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অ্যানি সেন, আবৃত্তিশিল্পী মিলি চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি আলীউর রহমান।

তারা বলেন, ‘আমরা হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধী নই। কিন্তু সিআরবির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস করে কাউকে এখানে হাসপাতাল করতে দেওয়া হবে না। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া বাতিলের এই দাবি শুধু নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের নয়। এই দাবি চট্টগ্রামের আপামর মানুষের। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় এই দাবি বিবেচনা করবেন, চট্টগ্রামবাসী এই আশা করে।’আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সিআরবির পাহাড় সংলগ্ন এলাকার যে সৌন্দর্য সেটাকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যতদিন পর্যন্ত হাসপাতাল নির্মাণের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হবে, ততদিন চট্টগ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’আমরা যারা ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন করেছিলাম, গণ আন্দোলন করেছিলাম, আমাদের মধ্যে অনেকেই এখন বেঁচে নেই। কিন্তু আমরা যারা এখনও জীবিত আছি, আমরা কখনোই সিআরবির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস করে হাসপাতাল বানাতে দেব না। তরুণ সমাজের প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থেকে এ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে’— বলেন রানা দাশগুপ্ত। কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ২৪ ধারা অনুযায়ী বৃটিশ আমলে নির্মিত রেলওয়ের ভবনগুলোকে ঐতিহ্য ভবন ঘোষণা করে পুরো এলাকাকে সংরক্ষিত করা হয়েছে। এখানে শিরিষতলাকে ঘিরে একটি সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গন গড়ে উঠেছে। এখানে কোনোভাবেই হাসপাতাল হতে দেওয়া যায় না। জনগণের টাকায় ধনীদের জন্য চট্টগ্রামে আর হাসপাতালের দরকার নেই। চট্টগ্রামের ধনীদের হাসপাতাল আছে। বিত্তবানরা এর চেয়েও বেশি অসুস্থ হলে ভারতে, ব্যাংককে যেতে পারেন। এখন আমাদের দরকার গরীব মানুষের জন্য হাসপাতাল। সিআরবির বাইরে চট্টগ্রামে একটি গরীবের জন্য হাসপাতাল হোক।’‘ডিসি হিলে একটি মুক্তমঞ্চ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে আমরা ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে আসছি। সেই ডিসি হিলে এখন কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা সিআরবিকে রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাব, সঙ্গে ডিসি হিল পুনরুদ্ধারের আন্দোলনও করব’— বলেন আবুল মোমেন।

কর্মসূচি চলাকালে রানা দাশগুপ্ত ও আবুল মোমেন সংগঠকদের সঙ্গে নিয়ে সিআরবিতে হাসপাতালের জন্য প্রস্তাবিত স্থানে গিয়ে গাছের চারা রোপণ করেন।