ধনীদের ভ্রমণের নতুন গন্তব্য হচ্ছে মহাকাশ

ধনীদের ভ্রমণের নতুন গন্তব্য হচ্ছে মহাকাশ
মহাকাশ মানবজাতির গভীর আগ্রহ ও কৌতূহলের অন্যতম ক্ষেত্র। মহাকাশে ভ্রমণ মানুষকে হাজার বছর আগে থেকেই প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে আসছে। বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের বিকাশ এবং নতুন নতুন উদ্ভাবন মানুষের সেই দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে সত্যি করার সুযোগ করে দেয়। যদিও সেই সময়ে মহাকাশ ভ্রমণ পরাশক্তিধর দেশের রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত সম্মানের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন মহাকাশে ভ্রমণের শ্রেষ্ঠত্ব দখলের লড়াইয়ে নেমেছিল। দুই পক্ষই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে মহাকাশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য। যাদের এই প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো চাঁদে পা রেখেছিল মানুষ। যদিও সেই সময় পেরিয়ে গেছে। মহাকাশ নিয়ে গবেষণায় রাষ্ট্রের তহবিল বরাদ্দের চাপ কমে এসেছে। এই সময়ে মহাকাশ নিয়ে গবেষণার শূন্যতা পূরণে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি খাত। মহাকাশ ভ্রমণে মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করেছেন বেশ কয়েক জন উদ্যোক্তা। চলতি মাসেই মহাশূন্যে বাণিজ্যিক ভ্রমণের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছেন দুই জন ধনী ব্যবসায়ী। একজন ব্রিটিশ বিলিওনেয়ার রিচার্ড ব্র্যানসন অন্যজন মার্কিন ব্যবসায়ী জেফ বেজোস। গত ১১ জুলাই রিচার্ড ব্র্যানসনকে নিয়ে ভার্জিন গ্যালাকটিক নামে একটি যান মহাকাশের দ্বারপ্রান্তে ভ্রমণের পর নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসে। এক ঘণ্টাব্যাপী যাত্রায় ইউনিটি-২২ নামের এই মহাকাশযানটি ঘণ্টায় ৩ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে উড়ে যায়। এসময় কয়েক মিনিট ধরে রকেটের ছয় যাত্রী ভরশূন্যতার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ভ্রমণের পর ব্র্যানসন বলেন, এই পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের ভেতর দিয়ে মহাকাশে পর্যটনের নতুন এক যুগের সূচনা হবে। আগামী বছর বাণিজ্যিকভাবে এই এ ধরনের পর্যটন শুরুর কথা রয়েছে। গত সপ্তাহে নিজের রকেট জাহাজ নিউ শেপার্ডে করে মহাকাশে ছোট-খাটো ভ্রমণ করে ফিরেছেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। তার এই রকেট জাহাজটিতে এবারই প্রথম কোনো ক্রু ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। এ যাত্রায় তার সঙ্গে ছিলেন তার ভাই মার্ক বেজোস, মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার দৌড়ের একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে পরিচিত ৮২ বছর বয়সি ওয়ালি ফাঙ্ক এবং ১৮ বছর বয়সি একজন শিক্ষার্থী। তারা এমন একটি ক্যাপসুলে করে এই ভ্রমণ করেছেন যার জানালাগুলো বড় থাকায় পৃথিবীর চমকপ্রদ দৃশ্য উপভোগের সুযোগ পেয়েছেন। পরিভ্রমণ শেষে মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডের মাথায় ক্যাপসুলটি পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই দুই ব্যবসায়ীর ভ্রমণের পর মহাকাশ ভ্রমণের এক নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। মহাশূন্যে কয়েক মিনিটের অভিজ্ঞতার জন্য প্রতিটি টিকিটের ব্যয় পড়বে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার (২ কোটি ১২ লাখ টাকা)। ব্র্যানসনের ভার্জিন গ্যালাকটিকে চড়ে মহাকাশে যেতে ইতিমধ্যে টিকিট রিজার্ভ করেছেন ৮ হাজারের বেশি মানুষ। অন্যদিকে ৭ হাজার ৬০০-এর বেশি মানুষ ব্লু অরিজিনের মাধ্যমে মহাকাশে যেতে চায়। তারা ইতিমধ্যে নিবন্ধন করেছেন। অনেকে টাকাও জমা দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০৪০ সাল নাগাদ মহাকাশ ভ্রমণ ব্যবসা ৩৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে। এর আগে সোভিয়েত যুগের সোয়ুজ ক্লাস মহাকাশ যানে কাউকে মহাকাশে যেতে হলে আড়াই কোটি ডলার ব্যয় করতে হতো। আর এমন মানুষের সংখ্যাও ছিল হাতেগোনা। ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এমন যাত্রীর সংখ্যা ছিল মাত্র সাত। কিন্তু এখন তার চেয়ে ১০০ গুণ কম খরচে মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ দিতে চাইছে কোম্পানি দুটি। কিন্তু তারপরও এত অর্থ ব্যয়ে কত মানুষ যেতে পারবেন। বরং অনেকেই মনে করেন, এটি হবে অতি ধনী মানুষের ‘জয়রাইড’।