সারাদেশের মতো চট্টগ্রামে ৩২৬টি কেন্দ্রে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু

সারাদেশের মতো চট্টগ্রামে ৩২৬টি কেন্দ্রে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু
সারাদেশে ২৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠী, নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে আজ শনিবার (৭ আগস্ট) থেকে করোনার টিকাদান কার্যক্রম সিটি করপোরেশন এলাকা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়েনে মোট ৩২৬টি কেন্দ্রে করোনার গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মহানগরে ১ম দিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।।শনিবার (৭ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া টিকাদান কার্যক্রম চলবে বেলা ৩টা পর্যন্ত। ভোরসকাল থেকেই ঝরছে বৃষ্টি। কখনো মুষলধারে আবার কখনো থেমে থেমেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছেন নারী পুরুষ চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ১৯০টি ইউনিয়নে টিকা দিতে কেন্দ্রে ভিড় করেছেন ২৫ বছর ও তদূর্ধ্বরা। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সকালে ওয়ার্ড পর্যায়ে করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরী। ও চসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র ২০ (দেওয়ান বাজার) চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী বর্তমান কাউন্সিলর, সাংগঠনিক সম্পাদক, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।.৩২ (আন্দরকিল্লা) জহর লাল হাজারী; বর্তমান কাউন্সিলর ও উপ-দপ্তর সম্পাদক, মহানগর আওয়ামী লীগ। ও ২১ (জামালখান) শৈবাল দাশ সুমন; বতর্মান কাউন্সিলর ও সদস্য, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। টিকা প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রতি কেন্দ্রে ৩০০ জন করে টিকা নিতে পারবেন। ৩টি বুথে একদিনে ৯০০ জন টিকা পাবেন। এর বাইরে স্থায়ী ১১টি কেন্দ্রে টিকাদানও অব্যাহত থাকবে। সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রাম উপজেলাগুলোতে মোট ইউনিয়ন ১৯০টি। এছাড়া ১৩টি পৌরসভা রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় একটি করে টিকাদান কেন্দ্র হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে ৬০০ জন টিকা নিতে পারবেন। টিকাদানে প্রতি বুথে একটি করে টিম কাজ করছে। প্রতি টিমে ২ জন ভ্যাক্সিনেটর (টিকাদান কর্মী) ও ৩ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত আছেন সারাদেশের ৪ হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, ১ হাজার ৫৪টি পৌরসভা ও ১২টি সিটি কর্পোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডে করোনার টিকা দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে অধিদপ্তর।
ওয়ার্ডভিত্তিক টিকা কার্যংক্রম চলমান থাকার দিনেও নগরের স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। এসময় আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে টিকা নিতে আসা নুরুন্নেছা বেগম বলেন, ‘ওয়ার্ডভিত্তিক টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় স্থায়ী টিকা কেন্দ্রগুলো ফাঁকা থাকবে ভেবে এসেছি। কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে নগরের সব মানুষ ভিড় করেছে এইখানে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরের ৪১ ওয়ার্ডের ১২৩ টিকা কেন্দ্রে ৩৬ হাজার ৭৩৫ জনকে গণটিকার আওতায় আনা হয়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক টিকা কেন্দ্রে ২২ হাজার ৮৯৫ জন পঞ্চাশোর্ধ ও ১৩ হাজার ৮৪০ জন পঞ্চাশ বছরের নিচে মানুষকে টিকা নিয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ হাজার ৮৫৫ জন নারী ও ২০ হাজার ৮৮০ জন পুরুষ। তাছাড়া ১০টি টিকা কেন্দ্রে ৯ হাজার ৯৮১ জনকে দেওয়া হয়েছে টিকা। একদিনে সর্বমোট ৪৬ হাজার ৭১৬ জনকে টিকা পেয়েছে।
টিকা নিতে আসা শাহনাজ সুলতানা বলেন, ‘সকাল ৭ টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। জেনারেলে হাসপাতালে দুবার গিয়েও টিকা পাইনি। তাই এখানে টিকা নেতে এসেছি। কোনো ঝামেলা ছাড়া টিকা নিতে পেরে তিনি খুশি হয়েছেন।’
অন্যদিকে আশেকুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘কাউন্সিলরের পরিচিত মানুষদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ টিকা পাইনি। টোকেন সিস্টেমে টিকা দেওয়া হয়েছে। এভাবে এলাকাভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচিতে প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে। না হয় এমন স্বজনপ্রীতির কারণে অনেকে টিকা নিতে আগ্রহ হারাবে।’

এই ক্যাম্পেইন কার্যক্রমে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী এবং ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত থাকবেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম এসব কথা জানান।।৭ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মূলত ২৫ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে পঞ্চাশোর্ধ জনগোষ্ঠী, নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

ক্যাম্পেইন কার্যক্রমের আওতায় আজ ৭ আগস্ট দেশের সব ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। ইউনিয়নের যেসব ওয়ার্ডে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কারণে ৭ আগস্ট করোনার টিকা দেয়া সম্ভব হবে না এবং পৌরসভার কোনো ওয়ার্ডে ৭ আগস্ট টিকা দেয়া সম্ভব হবে না, এসব জায়গায় ৮ ও ৯ আগস্ট টিকা দেয়া হবে। তবে ৭ থেকে ৯ আগস্ট এই তিনদিন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভ্যাকসিনেশন চলবে।

এছাড়া ৮ ও ৯ আগস্ট দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় টিকা দেয়া হবে। আর ১০ থেকে ১২ আগস্ট ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে টিকাদান কার্যক্রম চলবে।