নারীরা পুরুষের সহযোগী, সহযোদ্ধা -প্রধানমন্ত্রী

নারীরা পুরুষের সহযোগী, সহযোদ্ধা -প্রধানমন্ত্রী
আজ (০৯ ডিসেম্বর)বৃহস্পতিবার
নারী জাগরণের অগ্রদূতের জন্ম ও প্রয়াণ দিবসে নারী মুক্তির আন্দোলন বেগবান করার দৃপ্ত শপথে সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বৃহস্পতিবার বেগম রোকেয়া দিবস ও রোকেয়া পদক প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী এবছর প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্তভাবে এবার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় দেশের মনোনীত ৫ জন বিশিষ্ট নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২১’ প্রদান করেন।আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া পদক-২০২১ প্রাপ্তরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার কাছ থেকে সম্মাননা পদক তুলেদেন।

তাদের মধ্যে নারী শিক্ষায় অবদানের জন্য পদক পেয়েছেন কুমিল্লা জেলার প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বেলা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় যশোর জেলার অর্চনা বিশ্বাস, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কুমিল্লা জেলার মরহুমা শামসুন্নাহার রহমান পরাণ (মরণোত্তর), সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ড. জিনাত হুদা ও তার নিজ জেলা মুন্সিগঞ্জ এবং পল্লী উন্নয়নে অবদান রাখায় কুষ্টিয়া জেলার গবেষক ড. সারিয়া সুলতানা।১৮৮০ সালের এই দিনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দের এক নিভৃত পল্লীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এ মহীয়সী নারী ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আইনের পাশাপাশি মানসিকতার পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, নারীরা পুরুষের সহযোগী, সহযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও সমান অংশগ্রহণ জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বেগম রোকেয়া উপলব্ধি করেছিলেন সমাজ তথা রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। তার এই উপলব্ধি ও আদর্শ আজও আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়।রোকেয়া পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আমি বাঙালি নারী শিক্ষার প্রসার ও নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই। বেগম রোকেয়ার জীবনাচরণ নারী শিক্ষার প্রসারে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশে নারী শিক্ষার প্রসার ও নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পথিকৃৎ।
মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থায় নারীর সমান অধিকারের জন্য আমৃত্যু লড়াই করেছেন। রোকেয়া তার মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী ইত্যাদি কালজয়ী গ্রন্থে ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে ধর্মীয় গোঁড়ামি, সমাজের কুসংস্কার ও নারীর বন্দিদশার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। বাল্যবিবাহ, যৌতুক, পণপ্রথা, ধর্মের অপব্যাখ্যাসহ নারীর প্রতি অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন। মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে নারীকে গৃহকোণে আবদ্ধ রাখার ধ্যান-ধারণা পাল্টাতে তিনি ছিলেন সদা সোচ্চার। তার দেখানো পথ ধরেই নারীমুক্তি আন্দোলন চলছে।’বেগম রোকেয়া শুধু নারী শিক্ষার অগ্রদূতই ছিলেন না। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে বেগম রোকেয়া তার শাণিত অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন সমাজে নারীর অধস্তন অবস্থা নারী উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। তাই তার চিন্তা-ভাবনা-উদ্বেগ সর্বক্ষণ আবর্তিত ছিল নারী জাগরণ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে।নারীকে অবরোধবাসিনী করে বিকলাঙ্গ করার প্রথা উচ্ছেদসহ নারী মুক্তি, নারীর অগ্রযাত্রা ও নারী শিক্ষা প্রবর্তনে তার ত্যাগী ভূমিকা তাকে মহীয়সী করেছে। ‘কন্যাগুলিকে সুশিক্ষিত করিয়া কার্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও, নিজের অন্নবস্ত্র উপার্জন করুক’ শতবর্ষ আগে এভাবেই বেগম রোকেয়া তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে নারীদের শিক্ষিত তথা আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বেগম রোকেয়ার চিন্তার গভীরতায় এবং দৃষ্টির প্রসারতায় রচিত সাহিত্য আমাদের জাতীয় জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে।