মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভূবনে – মাহবুব উল আলম

মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভূবনে
– মাহবুব উল আলম
লেখক (গীতিকার – বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশান)
একাকীত্ব নিয়ে এই সময়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে। চলুন ব্যপারটিকে একটু অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি।পৃথিবী ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। পারিবারিক নিউক্লিয়াসগুলো প্রতিনিয়ত নতুন রুপ নিচ্ছে। দীর্ঘ দিনের লালিত পারিবারিক মূল্যবোধগুলো নতুন সংগায় সংগায়িত হচ্ছে।
একাকীত্ব মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমন মানুষ পৃথিবীতে নেই যিনি একাকীত্বে ভোগেননি। এখানে দেখার বিষয় এটাকে কে কিভাবে হ্যান্ডল করছেন। একটা কথা বলে রাখি জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানোর নাম জীবন নয়। বরং জীবনের মুখোমুখি হওয়ার মধ্যেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা। একা থাকতে না পারলে জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলা, এটা কোন সমাধান নয়। এটা ভালো কোন উদাহরনও হতে পারে না। জীবন আমাদের সুযোগ দিয়েছে বাঁচার। সেটাকে তুচ্ছ করা বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নয়।
একাকীত্বে ভূগলে আমরা মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে পারি। এতে একটা আলাদা পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে পারি যা আমাদের একাকীত্ব দূর করতে পারে।
আশেপাশের বাচ্চা গুলোকে নিয়ে মজার গল্পের আসর বসাতে পারি। সহায় সম্পদ থাকলে পারি আশে পাশের বস্তিগুলোতে খাবার বিলাতে পারি। সম্ভব হলে গরিব শিশুদের একদিন একটু ভালো মন্দ খাবার খাইয়ে আনন্দ দিতে পারি, পারি একদিন তাদেরকে শিশু পার্কে ঘুরিয়ে আনতে। রিভলভারটা (সম্ভব হলে ফেরৎ দিয়ে) নবায়ন না করে ওই টাকাতে হাসপাতালের কোন অক্ষম রোগীর বিল মেটাতে পারি। আপনার থেকেও কস্টে যারা আছে তাদের পাশে দাঁড়ান, যে শান্তি আপনি তাতে পাবেন সেটাই আপনার একাকীত্ব ভুলিয়ে দেবে। আত্নীয় স্বজনদের বাড়ীতে পালা করে বেড়াতে যান। নাগরিক জীবনে আজকাল ক্লাব আছে। কোন ক্লাবের মেম্বারশীপ নিয়ে নিতে পারেন। রোটারি, লায়নস ইত্যাদি বিভিন্ন সমাজ কল্যানমূলক সংগঠনের সাথে জড়িত হতে পারেন। কে আপনার জন্য কি করেছে এভাবে না ভেবে আপনি নিজে কি করেছেন নিজের জন্য সেটা ভাবুন তাহলে আর হতাশা আসবে না।
একাকীত্ব। একটি অস্থায়ী অনুভূতি।
বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ একাকীত্বের কষ্ট থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাকীত্ব বোধ ফিকে হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এমন কোন কাজ করুন যেটা আপনি পছন্দ করেন। বিশেষ করে সেই কাজটি, যেটা আপনার মনোযোগ এতোটাই কেড়ে নেবে যে সময় কিভাবে কাটছে আপনি ভুলে যাবেন।
যারা একাকীত্ব ভোগেন, তাদের অন্যের প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তিটা নড়বড়ে। তাই এই সমাধানটির মূল বিষয়বস্তু হল, মানুষের ভেতর থেকে এমন ভাল কিছু খুঁজে বের করা যেন তার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।
প্রতিটি মানুষের একাকীত্বের কারণ আলাদা। কেউ হয়তো শারীরিকভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেন, আবার কেউ হয়তো শিকার হয়েছেন বৈষম্যের, কারও পক্ষে অন্যকে বিশ্বাস করা কঠিন, আবার অনেকেই জানেন না নিজের মন মানসিকতার সঙ্গে মিল আছে এমন মানুষ কোথায় পাবেন। আবার কেউ জনারণ্যে থেকেও বোধ করতে পারেন একাকীত্ব। একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান বের করার সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হল, কেন একাকীত্ব অনুভব করছেন সেটা আগে জানা।
অর্ধেক গ্লাস খালি না দেখে অর্ধেক গ্লাস ভরা পানি আছে সেটা দেখেন। জীবনের সব শূণ্যতা পূর্ণতা পায় না। থাকনা জীবনে কিছু শূণ্যতা। এর জন্য হাহাকার করে জীবন নষ্ট করা বোকামী। জীবনের সব কিছুতেই নেতিবাচক না খুঁজে, ইতিবাচক দিকগুলো দেখেন। জীবন একটাই আর সেটা এমনিও থাকবেনা – তাই সেটা কাজে লাগান, এর পরও একা বোধ করলে সব বেচে দিয়ে বের হয়ে যান দেশ বা বিদেশ দেখতে, কত সুন্দর এই দুনিয়ার কতটুকুই আর দেখেছেন আপনি?
একাকীত্বের সমাপ্তি মৃত্যুতে না হোক, প্রতিটি মৃত্যু হোক স্বাভাবিক।