একটা মহল সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে প্রধানমন্ত্রী

শনিবার বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এ বৈঠকে সরকারকে উৎখাতের দাবি যারা তুলছেন- তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে চাইলেন, আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনায় কোথায় ব্যর্থ হয়েছে একথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে এদেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনই ক্ষমতা দখলের জন্য পেছনের দরজা ব্যবহার করেনি, বরং তারা সব সময় নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছি। আওয়ামী লীগ কখনো পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি বা এটি কোনো মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে তৈরি করা কোনো সংগঠনও নয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কিছু আছে, দলটল করার চেষ্টা করছে, নানা কথা বলছে, রোজই সরকার উৎখাত করার চেষ্টা করছে- এখানে আমার একটা প্রশ্ন, তারা যে এ সরকারকে উৎখাত করতে চায়, আমাদের অপরাধটা কী? সেটাই আমি জিজ্ঞেস করি। অপরাধটা কী? কোথায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি? তারা শুধু ব্যর্থতাই দ্যাখে’।
বর্তমান সরকারের আমলে জনগণের জীবন-মানের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অথচ এদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, দেশ উন্নয়নশীল, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্য বিমোচন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি- যেখানে ৪০ ভাগ ছিল আজকে তা আমরা প্রায় ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি’।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এবারের সেন্সাস রিপোর্টে হয়ত আপনারা অবাক হয়ে দেখবেন যে, এ দারিদ্র্যের হার বা হতদরিদ্রের হার এমনভাবে কমে গেছে, যেটা সারা বিশ্ব বিস্মিত হবে। এটা আমি বলতে পারি। ঠিক যেভাবে আমরা কিছু কাজ করে যাচ্ছি’।
বাংলাদেশ আজকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটু কিছু জিনিসের দাম বাড়ার প্রবণতা ছিল। আমরা সাথে সাথে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, তাতে প্রকৃতপক্ষে সেভাবে তো জিনিসের দাম বাড়েনি। কিন্তু জিনিসের দাম তো সারা বিশ্বব্যাপী বেড়েছে।
‘আপনারা যদি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হিসাবটা নেন কোথাও ১০ শতাংশ ইনফ্লেশন, আমেরিকায়ই তো তাদের প্রেডিকশন আগামীতে ১০ শতাংশ ইনফ্লেশন হবে এবং ইউরোপে কোনো কোনো দেশে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত ইনফ্লেশন বেড়ে গেছে; সব জিনিস পাওয়া যায় না। ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। লন্ডনে রেশন করে দেওয়া হয়েছে। এক লিটারের বেশি কেউ তেল কিনতে পারবে না। ওখানে কিন্তু প্রত্যেকটা জিনিস সুনির্দিষ্ট একজন, একটা পরিবার এক লিটার তেল কিনতে পারবে, তার বেশি নিতে পারবে না’।
বিশ্বজুড়ে এমন অবস্থা চলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে আমাদের শিপিংয়ে ভাড়া এত বেড়ে গেছে। তারপর যেসব দেশ থেকে আমরা সাধারণত যেগুলো আমদানি করি এ আমদানির ওপর একটা বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সেটাও আপনাদের মনে রাখতে হবে।
‘আমাদের দেশে যারা… তাদেরকেও তো সেটা চিন্তা করতে হবে। যেখানে সারাবিশ্বে দাম বেড়ে যাচ্ছে, মানুষের যে কষ্ট, অন্তত আমাদের দেশে তো এখন মানুষ খেয়ে পরে চলতে পারছে’।
‘ইউক্রেনের যুদ্ধের পর পুরো ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থা, এমনকি আমেরিকায়ও তার প্রভাব পড়ছে, ইংল্যান্ডে প্রভাব পড়ছে, বিশ্বব্যাপী প্রভাব পড়ছে। আমরা তো এর থেকে বাইরে না এখন। কারণ আমাদের কিছু জিনিস তো নিজেদের উৎপাদন হয় না, বাইরে থেকে আনতে হয়’- যোগ করেন তিনি।
দেশে পেঁয়াজ ও তেল উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেক্ষেত্রে যেমন আমাদের পেঁয়াজের সমস্যাটা, এখন আমরা অনেক পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারি। সেটা নিয়ে আর পেঁয়াজের কান্না আর কাঁদতে হবে না। এরকম একটা অবস্থায় আমরা আনতে পেরেছি।
‘এখন আছে ভোজ্যতেল। সেটাও আমি মনে করি, আমরা যদি উদ্যোগ নেই আমরা ওটাও সমাধান করতে পারি। কারণ আমাদের দেশে এক সময় বাদাম তেল হত। একেবারে ছোট ছোট আকারে এলাকাভিত্তিক বাদাম তৈরি করে তারা তেল বানাত আর সেই তেল দিয়েই ভাজা পোড়াটা হত। আমাদের সেদিকে আবার দৃষ্টি দিতে হবে। তাছাড়া আমাদের ভালো শস্য হচ্ছে, তিল হচ্ছে অন্যান্য যেগুলো তেল আমাদের ধানের কুড়া থেকে তুষ থেকে তেল হচ্ছে’।
এভাবে আরো তেল উৎপাদনে কোন কোন পদ্ধতি নেওয়া যেতে পারে সেটা নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।
বিশ্বব্যাপী যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আর তার প্রভাব কিন্তু আমাদের ওপরও আসতে পারে। কাজেই আমরা যদি এখন থেকে সতর্ক হই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন যে, আমার মাটি আর মানুষ আছে, আমি তাই দিয়েই তো দেশ গড়ব। আমাদের সেই মাটিও আছে, মানুষও আছে। তাহলে আমরা পারব না কেন?
‘আমরা কিন্তু একটু উদ্যোগ নিলেই পারি। সেটা আমরা করতে পারব। সেইভাবেই আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে’।