কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হবে পদ্মা সেতুর আদলে

শামীম শারমিন প্রতিবেদনঃ চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হবে পদ্মা সেতুর আদলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের প্রাথমিক নকশা তৈরি করে প্রস্তাবনা দিয়েছে কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী, সেতুর ওপরে থাকবে দুই লেইনের সড়ক এবং নিচে থাকবে দুই লেইনের রেললাইন।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর ওপর বিদ্যমান কালুরঘাট সেতু থেকে ৭০ মিটার উজানে অর্থাৎ উত্তরে নতুন সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা।

বুধবার (৬ জুলাই) সকালে নগরের রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবিতে কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতুর অগ্রগতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে এসব সিদ্ধান্ত জানানো হয়।এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষীত কালুরঘাট সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়ায় গতি ফিরেছে বলে মনে করছেন সেতু এলাকা অর্থাৎ চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এবছর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার। পদ্মা সেতুর আদলে নির্মিত হবে এ সেতু। উপরে গাড়ি চলবে, আর নিচে চলবে ট্রেন। মোট তিনটি লাইন থাকবে। এ সেতুর সমস্ত ব্যয় বহন করবে কোরিয়া সরকার। কালুরঘাট সেতুর টেন্ডার শেষ করতে ৭-৮ মাস সময় লাগবে। আগামী আগস্ট মাসে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। চলতি বছরেই টেন্ডার জটিলতা শেষ হবে। বর্তমান সেতু থেকে হালদার উজানের দিকে ৭০ মিটার দূরে নতুন সেতু নির্মিত হবে। এছাড়া রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে বিভাগ একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করবে।সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বোয়ালখালী–চান্দগাঁও আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ।বলেন, ২০১০ সালে কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু উদ্বোধন করতে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিডিএর মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন— কালুরঘাটেও একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। সেতুতে একসঙ্গে গাড়ি ও ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু দীর্ঘ এগার বছর পার হয়েছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাবেক সাংসদ এই বিষয়ে সচেষ্ট থেকেও সেতুর বাস্তবায়ন সম্ভব হযনি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন জটিলতার কারণে একনেকে গিয়ে ফেরত এসেছে এই প্রকল্প। এরপর আমি দায়িত্বে আসার পর আবার কাজ শুরু করি। নকশার জন্য টেন্ডার হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় এটি রিভাইস করার জন্য বললেন।

তিনি আরও বলেন, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। লেখা হয়েছিল দুটো সেতুর কথা। একটা রেলসেতু, আরেকটা সকড় সেতু। পরবর্তী সময়ে ওই নকশা করে যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যায় তখন তিনি বলেন, আমি তো এরকম বলিনি। একটিই সেতু হবে। সেটিতে গাড়ি ও ট্রেন দুটোই চলবে। এছাড়া দুপাশে দুমিটার করে চার মিটার হাঁটার রাস্তা থাকবে। বিভিন্ন প্রচেষ্টার পর আবার টেন্ডার হয়েছে। যারা এটা নিয়ে পরিশ্রম করেছিল তাদেরকেই কাজটি দেওয়া হয়েছে। আগামী আগস্টে রেলসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিকল্পনা জমা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আজ (বুধবার) রেল বিভাগের সাথে চূড়ান্ত বৈঠক হয়েছে।কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) সহজ শর্তে পুরো টাকা বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ হিসেবে দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফোকাল পারসন রেলওয়ের কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা।

তিনি জানান, নদীপথে সেতুর ওপরের অংশ পার হয়ে স্থলভাগে সড়ক হবে অর্ধবৃত্তাকারে। এর এক প্রান্ত থাকবে চট্টগ্রাম নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথার অদূরে জানে আলী হাট রেলস্টেশন পার হয়ে মূল সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত। আরেক প্রান্ত থাকবে বোয়ালখালী অংশে বিদ্যমান কালুরঘাট সেতুর সংযোগ সড়কের সঙ্গে, তবে বর্তমান সংযোগ থেকে কিছুটা দূরে। আর ডাবল রেললাইনের একাংশ শুরু হবে জান আলী হাট থেকে, এর অপর অংশ থাকবে বোয়ালখালী উপজেলার গোমদণ্ডী রেলস্টেশনে।