‘সিন্ডিকেট’ ভেঙে তছনছ কোরবানির চামড়া কেনাবেচার চিরচেনা দৃশ্যপট পাল্টে গেছে

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কোরবানির চামড়া কেনাবেচার চিরচেনা দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। অলিগলির মুখে কিংবা সড়কে কাঁচা চামড়া নিয়ে তরুণ-যুবকদের এবার তেমন দেখা মেলেনি। নগরীর যেসব স্পটে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা কোরবানির চামড়া এনে জমা করা হত, সেখানেও চামড়া দেখা গেছে অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক কম। নেই আগের সেই চেনা হাঁকডাকও। আড়তেও নেই আগের মতো ব্যস্ততা। এবার চামড়া কেনাবেচার পরিস্থিতি অনেকটাই সুশৃঙ্খল দেখা গেছে।কোরবানি শেষে বিভিন্ন স্থান থেকে কম মূল্যে চামড়া সংগ্রহ করেছেন মৌসুমি ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন ও এতিমখানা বিনামূল্যে চামড়া সংগ্রহ করেছেন।চট্টগ্রামে চামড়ার বাজারে এই পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছে আনজুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের অঙ্গ সংগঠন গাউছিয়া কমিটি। সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবক কয়েক হাজার মাদরাসার ছাত্র এবার ট্রাক নিয়ে নগরীর বিভিন্ন অলিগলি এমনকি ঘরে ঘরে গিয়ে কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছেন। কোরবানি দাতাদের অধিকাংশই বিনামূল্যে চামড়া দিয়েছেন তাদের। এর ফলে দৃশ্যত ‘একদিনের চামড়া ব্যবসায়ী’ বা মৌসুমি সংগ্রহকারী-আড়তদার এবং তাদের প্রতিনিধি সিন্ডিকেটকে হটিয়ে এবার চট্টগ্রামের চামড়ার বাজারের বড় নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী সংগঠন গাউছিয়া কমিটি।

গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের সদস্যরা বিভিন্ন স্থান থেকে গরু মহিষ ও ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেছেন। অনেকেই তাদের বিনামূল্যে চামড়া দিয়েছেন।

তারা বলছেন, বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছি। চামড়া দাম কম হওয়ায় অনেকেই আমাদের বিনামূল্যে দান করে দিয়েছেন। সে চামড়াগুলো আমরা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে পরে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করবো।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি এবার কোরবানির দিন মহানগরের বাইরে থেকে আসা কাঁচা চামড়া কিনছে না। আড়তদাররা উপজেলার মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং মাদরাসা-এতিমখানা কর্তৃপক্ষের নিজ উদ্যোগে কাঁচা চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে কেনার কথা জানিয়েছেন।

কোরবানির পর দুপুর থেকে নগরীর মুরাদপুর, বিবিরহাট, আতুরার ডিপো, বহদ্দারহাট, চৌমুহনীসহ বিভিন্ন এলাকায় সংগ্রহ করা কাঁচা চামড়া নিয়ে আসছেন মৌসুমি সংগ্রহকারীরা। বিভিন্ন সড়কে জমছে কাঁচা চামড়ার স্তূপ।

প্রতিবারের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৪ টাকা, খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা। বকরির চামড়ার দর ১২ থেকে ১৪ টাকা।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বলেন, “কিছু চামড়া এসেছে। সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কেনা হচ্ছে। প্রথম দিন শুধু শহরের ভেতরে যেসব পশু কোরবানি হয়েছে সেগুলোর চামড়া আমরা কিনব। গরমের কারণে চামড়া ফেলে রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই লবণ দিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে রাখা জরুরি।

এবারের ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামে গরু, ছাগল, মহিষ মিলিয়ে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ।