দাপুটে জয় স্বরূপে দেখা দিলো টাইগাররা,

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়িয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে এসে গর্জে উঠলো টাইগাররা। স্বাগতিকদের বিধ্বস্ত করে দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে তামিমের দল লার-সবুজের প্রতিনিধিরা। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ২৫৬ রানের মাঝারি সংগ্রহ পায় টাইগাররা। ১৯ রানে তামিমের রানআউটে যেনো পতনের শুরু। ভালো শুরুর আভাস দিয়েও ৮ বলের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।স্বরূপে দেখা দিলো টাইগাররা, আগের দুই ম্যাচে বোলাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। শেষ ম্যাচে এবাদত-তাইজুল-মুস্তাফিজের তোপে দাঁড়াতেই পারছেন না জিম্বাবুইয়ান ব্যাটাররা।চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে স্বাগতিক দল। ৮৭ রান তুলতেই হারিয়েছে ৯ উইকেট। জিম্বাবুয়ে যখন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখনই ক্রিজে দাঁড়িয়ে যান দলটির লেজের সারির দুই ব্যাটসম্যান রিচার্ড এনগারাভা এবং ভিক্টর নিয়াউচি। বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে শেষ উইকেট জুটিতে ৫৮ বলে ৬৮ রান তোলেন তারা।

তবে এই জুটি শুধু হারের ব্যবধান-ই যা কমিয়েছে। ৩৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নিয়াউচিকে বোল্ড করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মুস্তাফিজ।

বাংলাদেশের পক্ষে ৫.২ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৭ রান খরচায় দলীয় সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজ। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন এবাদত হোসেন এবং তাইজুল ইসলাম। আর মেহেদি ও হাসান একটি করে উইকেট লাভ করেন।

হারারেতে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সাবধানী শুরুই করেছিলেন তামিম ইকবাল। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে খোলস ছেড়ে বের হওয়ার আভাস দেন তিনি। অধিনায়কের দেখাদেখি হাত খুলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের গতি বাড়ান আরেক ওপেনার বিজয়ও।

কিন্তু ইনিংসের অষ্টম ওভারের তৃতীয় বলে হয় সর্বনাশ। অফসাইডের দিকে খেলেই সিঙ্গেলের জন্য ডাক দেন বিজয়। সাড়া দিয়ে প্রায় মাঝ পিচে চলে যান তামিম। কিন্তু স্কয়ার অঞ্চল থেকে বলটি থামিয়ে দেন ওয়েসলে মাধভের। তার থ্রো ধরে স্ট্যাম্প ভেঙে ১৯ রান করা তামিমের বিদায়ঘণ্টা বাজান এনগারাভা।

সেই ওভারেই এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে দৃষ্টিনন্দন একটি ছক্কা হাঁকান বিজয়। কিন্তু পরের ওভারেই ঘটে বিপর্যয়। ওভারের প্রথম বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়েন নাজমুল শান্ত। দুই বল পর আপার কাট করে থার্ড ম্যাচে এনগারাভার দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন মুশফিকুর রহিম। দুজনের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি।

দুই ওভারের মধ্যে তিন উইকেট হারালেও সাহস হারাননি বিজয়। বরং যেখানে থেমেছিলেন তামিম, সেখান থেকেই দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন এ ডানহাতি ওপেনার। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারেই ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকান তিনি। দুই ওভার পর ব্র্যাডলি ইভান্সকে ভাসান স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে।

ইনিংসের ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ব্যক্তিগত পঞ্চাশ পূরণ করেন বিজয়। সাবলীল ব্যাটিংয়ে মাত্র ৪৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছয়ের মারে এ রান করেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে বিজয়ের এটি পঞ্চম ফিফটি, চলতি সিরিজের দ্বিতীয়। ফিফটির পরেও থামেনি বিজয়ের ব্যাট।

২১তম ওভারে ইভান্সের করা পায়ের ওপরের ডেলিভারিতে দারুণ এক ফ্লিক শটে সোজা গ্যালারির ছাদে পাঠিয়ে দেন এ ডানহাতি ওপেনার। পরের বলেই আবার হাঁকান বাউন্ডারি। অপরপ্রান্তে মাহমুদউল্লাহ ধীর ব্যাটিং করায় দলীয় শতরান পূরণ করতে খেলতে হয় এই ২১তম ওভার পর্যন্ত।

মনে হচ্ছিল প্রথম ম্যাচের না পাওয়া সেঞ্চুরিটি আজ হয়তো করে ফেলবেন বিজয়। কিন্তু লুক জঙউইর করা ২৫তম ওভারে ঘটে বিপক্ষে। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে লেট কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন বিজয়। তার ৭১ বলে ৭৬ রানের ইনিংসে ছিল ৬ চারের সঙ্গে ৪টি ছয়ের মার।

এরপর আফিফ হোসেনের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর ৫৭ বলে ৪৯ রানের জুটি। জুটিটি ভাঙে ধীরগতির মাহমুদউল্লাহ এনগারাভার একটি বল উইকেটে টেনে এনে বোল্ড হলে। ৬৯ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৩৯ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।

এরপর মেহেদি হাসান মিরাজও ২৪ বলে ১৪ রান করে সিকান্দার রাজার বলে এলবিডব্লিউ হন। তাইজুল রানআউট হন ৫ রানে। ২২০ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সেখান থেকে আফিফ হোসেন ধ্রুব প্রায় একাই দলকে লড়াকু পুঁজি পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থেকে বাংলাদেশকে এনে দেন ২৫৬ রানের সংগ্রহ। ৮১ বলে আফিফের ৮৫ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৬ বাউন্ডারি আর ২টি ছক্কার মার।

জিম্বাবুইয়ান বোলারদের মধ্যে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন ব্র্যাড ইভান্স আর লুক জঙউই।
বেশ ফুরফুরে ছিল স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। ২ ওভারে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের দারুণ শুরু। শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খেয়েছে জিম্বাবুয়েএকই সঙ্গে সিরিজ জয়ের আনন্দ স্বাগতিকদের আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে তুলেছে। বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ ছিল সামনে। তবে তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ, অভিষিক্ত পেসার ইবাদত হোসেনের দাপুটে বোলিংয়ের সঙ্গে মিরাজ ও তাইজুলের ঘূর্ণিতে ইতোমধ্যে চোখে সর্ষে ফুল দেখছে স্বাগতিক ব্যাটাররা। এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ২৩ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ৮৩ রান তুলতেই ৯ উইকেট হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। বল হাতে প্রথম ওভারে সাফল্য এনে দিয়েছে হাসান মাহমুদ। এরপর দ্বিতীয় ওভারে আঘাত হানে মেহেদী হাসান মিরাজ। ষষ্ঠ ওভারে গিয়ে পরপর দুই বলে জোড় আঘাত হানেন অভিষিক্ত ইবাদত হোসেন। ইবাদতের বাউন্ডে পরাস্ত হয়ে মাধেভেরে ক্যাচ তুলে দেন মিরাজের হাতে। পরের বলেই গত দুই ম্যাচে জিম্বাবুয়ের জয়ের নায়ক সিকান্দার রাজাকে বোল্ড করেন ইবাদত। অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত হ্যাটট্রিক করতে পারেননি ইবাদত। এরপর ইনোসেন্ট কাইয়াকে লেগ বিফোরে ফাঁদে ফেলেন তাইজুল ইসলাম। ষষ্ঠ উইকেটে টনি মুনিঙ্গাকেও স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তাইজুল। ২১তম এবং ২৩ তম ওভারে ৩ উইকেটের দেখা পান মোস্তাফিজুর রহমান। এনামুল হক বিজয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন লুকি জঙ্গি।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের হোয়াইটওয়াশ এড়াতে আজ স্বাগতিকদের মাত্র ২৫৭ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছে লার-সবুজের প্রতিনিধিরা। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে আজ বুধবার টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেটের বিনিময়ে ২৫৬ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ এড়াতে দুই উদ্বোধনী ব্যাটার তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয় বেশ দেখেশুনে শুরু করেছে। তবে দুর্ভাগ্যবশত রান আউটের ফাঁদে পড়েন তামিম ইকবাল। এরপর এনামুল হক বিজয় ও আফিফ হোসেন এই দুই ব্যাটারে কল্যানে স্কোরবোর্ডে বড় সংগ্রহ অর্জন করতে পেরেছে। এনামুল হক বিজয় ৬ চার ও ৪ ছক্কার সাহায্যে ৭১ বলে ৭৬ রান করেছেন। এছাড়া আফিফ হোসেন ৬ চার ও ২ ছক্কার সাহায্যে ৮৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। এছাড়া তামিম ইকবাল ১৯, মাহমুদউল্লাহ ৩৯, তাইজুল ইসলাম ৫ রান করেছেন। নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজু রহমান ও এবাদত হোসেন রানের খাতাই খুলতে পারেননি। স্বাগতিক বোলারদের মধ্যে ২টি করে উইকেট পেয়েছেন ব্রড ইভান্স ও লুকি জঙ্গি। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন রিচার্ড এনগারাভা ও সিকান্দার রাজা।