জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের বৈঠক করে যাচ্ছে বিএনপি: তথ্যমন্ত্রী

 

আজ শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর)বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে ক্রমাগতভাবে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে বিএনপি জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।আজ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ‘মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার, দৈনিক আজাদী এবং গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য শেষে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।সৌদি আরবের জেদ্দায় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র এক গোপন বৈঠকের ব্যাপারে প্রশ্ন করেন।

তথ্যমন্ত্রী জানান,১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বিএনপিকে ৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল। এটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান আদালতে জবানবন্দিতে বলেছেন। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এখনো নানা ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি বলেন,পাকিস্তনি গোয়েন্দা ও গোয়েন্দা সংস্থার সাথে তাদের যে দহরম-মহরম সেটা বহু পুরনো। এর প্রমাণ হচ্ছে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের বৈঠক, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।আলহাজ মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের ৫৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক সমিতি এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সমিতির সভাপতি এসএম জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, দৈনিক আজাদী সম্পাদক লায়ন এমএ মালেক, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম সিইনসি প্রমুখ।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি ষড়যন্ত্রের পথ অবলম্বন করে যে এগুতে পারেনি তারা নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে সক্ষম।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে মানুষ রায় দিয়ে টানা তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাতো না।প্রকৃতপক্ষে যখন করোনা ভাইরাসে পৃথিবী স্তব্ধ, মানুষ শঙ্কিত ভবিষ্যৎ নিয়ে, জনগণ প্রচন্ডভাবে উদ্বিগ্ন সেই সময়ে বিএনপি জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের বৈঠক করে বেড়াচ্ছে। সেটির প্রকাশ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের এই বৈঠক, যা প্রচন্ড নিন্দনীয়।  ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে মানুষের পাশে দাঁড়ান। এই ষড়যন্ত্র করে কোন লাভ হবে না।

তথ্যমন্ত্রী আরোও জানান,বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচনাকে সমাদৃত করার সংস্কৃতি লালন করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও আমাদের দল আওয়ামী লীগ মনে করে সমালোচনা পথ চলাকে শাণিত করে। সমালোচনা কাজকে পরিশুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন দেশে সংবাদপত্রের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪ শ। এখন বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদপত্র সাড়ে ১২ শ। তখন অনলাইন পত্রিকা ছিল হাতে গোণা কয়েকটি। এখন কয়েক হাজার অনলাইন পত্রিকা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র যে ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে অনেক উন্নত দেশেও কিন্তু সংবাদপত্রের এমন স্বাধীনতা নাই। যুক্তরাজ্যে ১৬৭ বছরের পুরনো পত্রিকা ছিল ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। সেটি পৃথিবীর বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ছিল এক সময়। সেই পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। একটি ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে মামলা হয়েছিল। মামলার পর তাদের ওপর বিরাট জরিমানা করেছে আদালত, সেই জরিমানা দিতে না পেরে কোম্পানি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, একজন এমপি’র বিরুদ্ধে ভুল বা অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে বিবিসি’র পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপ মহাদেশে হরহামেশা ভুল এবং অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে পত্রিকা এবং গণমাধ্যমকে জরিমানা দিতে হয়। আমাদের দেশে সেটি কখনো হয়নি। সংবাদপত্র এ সমস্ত কারণে বন্ধ হয়নি। সেজন্য বলছি অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে।

সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুরে মাত্র কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল, সবগুলো সরকার নিয়ন্ত্রিত। থাইল্যান্ডে সমস্ত টেলিভিশন চ্যানেলের ফিড সরকার নিয়ন্ত্রিত। সেখানে যদি সরকারের অপছন্দনীয় কোন কন্টেন্ট থাকে সেটা বাদ দেয়া হয়। আমাদের দেশে তা হয় না। কারণ আমরা মনে করি স্বাধীন মতপ্রকাশ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সেটি বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এক্ষেত্রে গত ষাট বছর ধরে বাঙালি জাতীয়তাবোধকে ধারণ করে, স্বাধীনতার চেতনা এবং স্বাধীনতার পূর্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ধারণ করে পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দৈনিক আজাদী পত্রিকা নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। সেজন্য দৈনিক আজাদী পত্রিকা নিশ্চয়ই সমাজ এবং রাষ্ট্রের ধন্যবাদ পাওয়ার অধিকার রাখে। এজন্য দৈনিক আজাদী পত্রিকা পরিবারকে আমিও ধন্যবাদ জানাই।’

দৈনিক আজাদী সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দৈনিক আজাদী পত্রিকা বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে একটি। ঢাকার অনেক পত্রিকার চেয়ে দৈনিক আজাদী পত্রিকার সার্কুলেশন অনেক বেশি। এই কৃতিত্ব প্রথমত ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সাহেবের, তিনি দূরদৃষ্টি নিয়ে এই পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

পরবর্তীতে যারা এই পত্রিকার হাল ধরেছেন এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে এই পত্রিকাকে অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালনা করে আসছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম যখন অন্য পত্রিকা ছাপেনি তখন দৈনিক আজাদী পত্রিকা ছেপেছে। সেজন্য দৈনিক আজাদী পত্রিকা পরিবার গর্ব করে বলে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা। আজাদী শুধুমাত্র পত্রিকা নয়, একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। একটি পত্রিকা বা একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সহজ কাজ নয়, বলেন তথ্যমন্ত্রী।