‘দূর কর অতীতের সকল আবর্জনা, ধর নির্ভয় গান’

স্বাগত ১৪৩০
আনন্দ ছড়িয়ে পড়ূক নতুন বছরজুড়ে
সম্প্রীতির আলোয় উদ্ভাসিত হউক বাংলা নববর্ষের এই আনন্দঘন মুহূর্তগুলো বছরভর ছড়িয়ে পড়ূক। সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধিতে ঋদ্ধ হোক বাংলাদেশ। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির আলোয় উদ্ভাসিত হোক অনাগত দিনগুলো।‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল বোশেখির ঝড়।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কবিতার ভেতর দিয়েই নতুন বছরে সব অপ্রাপ্তি ভুলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বাঙালি।
আজ শুক্রবার পহেলা বৈশাখ।। আজ সূর্যের নতুন আলোর সঙ্গে এসেছে নতুন বছর, বঙ্গাব্দ ১৪৩০। আজ নব আনন্দে জেগে ওঠার দিন।‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩০’-এ বর্ণিল উৎসবে মাতবে দেশ।
প্রতিটি নতুন বছর নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে, আসে শুভর প্রত্যাশায়। তাকে স্বাগত জানাতে মানুষ পথে নেমে আসে। ভোরের আলোয় গান গেয়ে আর মানুষের মঙ্গল কামনায় শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে বরণ করে নতুন বছরকে। এ বছর প্রতিটি স্কুল-কলেজ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করার সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন।
ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। নতুন বছর সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে নতুন প্রত্যাশা, নতুন শপথ। আজ দেশ জুড়ে নানা অনুষ্ঠানে গানে গানে, আনন্দ আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বন্ধু আত্মীয়স্বজন মিলে মিশে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে।
নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনাকে রাঙিয়ে দেবে ভোরের প্রথম রবির কিরণ। বর্ষবরণে সারাদেশেই ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বরাবরের মতো বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। নববর্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ,
বর্ষবরণের নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গুঞ্জরিত হবে নতুন দিনের গান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আকাঙ্ক্ষা করেছেন নতুন বছরে_ ‘মুছে যাক গ্গ্নানি ঘুচে যাক জরা/অগি্নস্নানে শুচি হোক ধরা’। এই চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা অন্যান্য পহেলা বৈশাখের মতো আজও মত ও পথ নির্বিশেষে সব বাঙালি হৃদয়ে দোলা দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা জানি, বাংলার হাজার বছরের বহমান লোকজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারায় বর্ষবরণ যুক্ত করেছে অসাম্প্রদায়িকতার এক নতুন অধ্যায়। সম্প্রীতির বাংলা নববর্ষে আমরা প্রত্যাশা করি_ আপাত রুদ্র বৈশাখ, কালবৈশাখীর তীব্র থাবা যেভাবে ধ্বংস করে যত আবর্জনা, উড়িয়ে নেয় জীর্ণ মলিন রিক্ততার দিন, ধ্বংসের ওপর সৃষ্টি করে নতুন বসতি, সেভাবে যেন নতুন বছরের দিনগুলোতে ধ্বংস হয় সংকীর্ণতা আর সাম্প্রদায়িকতার মানবতাবিরোধী সব অপশক্তি। যেন মানবিক মূল্যবোধে জাগ্রত অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ নতুন শক্তি ও সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যায় মহাকালের পানে। বাংলা নববর্ষ আমাদের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। ধর্ম-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র, জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে সবাই বাংলা নববর্ষে মিলিত হই। এ উৎসব আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির মানবিক মূল্যবোধে দেশকে ভালোবাসতে শেখায়। এ উৎসবে আমরা এক হয়ে বাঙালিত্ব তথা মানবতার জয়গান গাই। অস্বীকার করা যাবে না, বাঙালির ঐক্যের যে বিনিসুতার মালা পহেলা বৈশাখ গেঁথে চলছে, তা ছিন্ন করার অপচেষ্টাও কম হয়নি। কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতিই তা রুখে দিয়েছে বারংবার। ষাটের দশকে পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে বাংলার হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নির্বিশেষ সবাই ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করেছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানতে গিয়ে বরং উসকে দিয়েছিল সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের উপলব্ধি আর তা সংহত করতে স্বাধিকারের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। অবশ্য স্বাধীন বাংলাদেশেও আমাদের সাংস্কৃতিক সত্তার ওপর আঘাত হানার অপচেষ্টা চলেছে
রাজধানীতে প্রতি বছর ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু হয় পহেলা বৈশাখ উদযাপন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবে। আজ সবার ঠিকানা হয়ে উঠবে রমনা বটমূলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাংলা একাডেমি, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর এলাকা। রাজধানীতে ভোর সোয়া ৬টায় ছায়ানটের প্রভাতি আসরে তবলা বাদন দিয়ে শুরু হবে বর্ষবরণ উৎসব। প্রায় ছয় দশক ধরে বৈশাখে নতুন আবাহন নিয়ে হাজির হয় ছায়ানট। ছায়ানট বাঙালিকে বাংলাদেশে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে। এ দীর্ঘ পথচলা নিঃসন্দেহে জাতির জীবনে এক প্রেরণাসঞ্চারি ঘটনা। বিটিভি ছায়ানটের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে।বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। নববর্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ,