শাহ মোহছেন আউলিয়ার (রহ.)’র বার্ষিক ওরশ আজ»

আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়ার (রহ.)’র বার্ষিক ওরশ আজ মঙ্গলবার রুস্তম হাটের মাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছর ২০ জুন ৬ আষাঢ় মোহছেন আউলিয়ার বার্ষিক ওরশ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।ওরশ উপলক্ষে সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।গত দুদিনে দূর–দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসতে শুরু করেছেন।
ওরশকে ঘিরে পুরো বটতলীতে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নিরাপত্তা ও যানজট নিরসনে থানা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। প্রায় ৭ শত বছরের মত আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ সূফী মোহসেন আউলিয়া (রহ.)ওরশ শরীফে লাখ লাখ লোক দূর দূরান্ত থেকে ঝর বৃষ্টি সকল বাধা উপেক্ষা করে সমাবেত হতে থাকেন ভক্তরা বারো আউলিয়ার পুণ্য এবং ধন্য ভূমি চট্টগ্রাম আবাদ হয় পীর, আউলিয়া, ফকির দরবেশগণের মাধ্যমে। চট্টগ্রামে প্রকৃত পক্ষে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হয় সুদূর আরব থেকে আগত পীর আউলিয়াদের দ্বারা।
হযরত মুহাম্মদ (স.) কর্তৃক ইসলাম ধর্ম প্রচারিত এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সাহাবী, পীর, আউলিয়া, ফকির, দরবেশগণ সারা পৃথিবীতে ইসলাম প্রচার এবং প্রতিষ্ঠিত করেন। সুদূর আরব থেকে চট্টগ্রামে আগত পীর আউলিয়া, ফকির, দরবেশগণের মধ্যে মহান বুজুর্গ অলী হযরত শাহ মোহসেন আউলিয়া অন্যতম একজন।

মোহছেন আউলিয়ার মাজার এর ইতিহাস চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার দেয়াং পাহাড় ঘেরা বটতলী ইউনিয়নের রুস্তমহাট এলাকায় হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার মাজার।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, ৮২৫-৮৭০ হিজরির কোনো এক সময়ে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি চট্টগ্রামে আগমন করেন।

পরে আনোয়ারা উপজেলার ঝিওরি গ্রামে অবস্থান নেন। তৎকালীন শঙ্খ নদীর উপকূলে হুজুরা শরীফ নামে একটি আধ্যাত্মিক সাধনালয় গড়ে তোলেন।

এ হুজুরা শরীফকে কেন্দ্র করে এককালে শঙ্খ নদীর উপকূলে ঝিওরি গ্রাম গড়ে উঠেছিল।তবে মাজার পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) কখন এবং কিভাবে বাংলাদেশে আগমন করেন তার ইতিবৃত্ত জানা যায়নি।

ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের ‘পূর্ব পাকিস্তানে ইসলাম’ নামক গ্রন্থে হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার (রহ.) ওফাতকাল ১৩৯৭ খ্রিস্টাব্দ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঝিওরি গ্রামে প্রথম তাকে সমাধিস্থ করা হয় এবং সেখানেই মাজার গড়ে ওঠে। কিন্তু পরে শঙ্খ নদীর ভাঙনের কবলে পড়লে সেই সমাধি স্থানান্তর করা হয় আনোয়ারার বটতলীতে।

এটা শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার (রহ.) দ্বিতীয় মাজার।

মোহছেন আউলিয়ার মাজার পাকা ঘর হলেও উপরের অংশটুকু ছনের ছাউনি। ছাউনি বদলানোর সময় কর্মরত লোকদের শরীরে যতবার ঘাম বেরুবে ততবার কাজ বন্ধ রেখে তাদের গোসল করে আবার কাজ শুরু করতে হয়।

উল্লেখ্য, বটতলীস্থ শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার (রহ.) মাজারে একখানি কালো পাথরের শিলালিপি সযত্নে রক্ষিত আছে। লিপিখানিটি আরবিতে লেখা।
চট্টগ্রামে তাঁর আগমনের সময় কাল সঠিকভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হয় তের শতকের শেষের দিকে তিনি চট্টগ্রামে আগমন করেছিলেন। তিনি প্রখ্যাত পীর হযরত বদর শাহ (রহ.) এর সাথে চট্টগ্রামে আগমন করেছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। হযরত শাহ মোহসেন আউলিয়ার (রহ.) আদি নিবাস ইয়েমেনে। তাঁর পূর্বপুরুষের পরিচয় জানা না গেলেও বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে তিনি একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান ছিলেন। ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তিনি ইসলাম প্রচারে নেমে যান। তিনি ইয়েমেন থেকে প্রথমে ভারতে গৌড় রাজ্যে আগমন করেন। গৌড়রাজ্য তখন শিক্ষা, শিল্প সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল। গৌড়রাজ্যে কিছুদিন অবস্থান করার পর হযরত শাহ মোহসেন আউলিয়া (রহ.) পানি পথে চট্টগ্রামে আগমন করেন। তিনি চট্টগ্রামে এসে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত দেয়াং এর পাহাড়ে আস্তানা গাড়েন। দেয়াং এর পাহাড়ে অবস্থান করে তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে থাকেন। তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা এবং মোহনীয় শক্তি সবাইকে মোহিত করত।

হযরত শাহ মোহসেন আউলিয়া (রহ.) এর পরিচয় পাওয়ার পর সেসময় দলে দলে মানুষ এসে তাঁর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। তিনি চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। অল্প সময়ের মাঝে তাঁর অসংখ্য ভক্ত এবং মুরীদ সৃষ্ঠি হয়। বর্তমানে দেশে বিদেশে অগনিত ভক্ত রয়েছে। দীর্ঘসময় চট্টগ্রাম অবস্থান করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করে পরিণত বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ঝিউরী গ্রামে দাফন করা হয়। তাঁর কবরখানি শংখ নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় কবরখানি নদীর ভাঙ্গঁনের কবলে পড়লে হযরত মোহসেন আউলিয়া (রহ.) আনোয়ারার বটতলী ইউনিয়নের একজন বিশিষ্ঠ ব্যক্তিকে স্বপ্ন যোগে জানান যে তাঁর কবরখানি বটতলীতে স্থানান্তরিত করা হোক। কিন্তু সেই বিশিষ্ঠ ব্যক্তি স্বপ্নের ব্যাপারটি গুরুত্ব দেয়নি। পরবর্তী পর্যায়ে বটতলীর অপর তিন ব্যক্তিকে তিনি স্বপ্নযোগে একই কথা জানান। ঐ তিন ব্যক্তি স্বপ্নের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দেন এবং স্বপ্নের আদেশ অনুযায়ী তারা এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারা নদীর তীরে গিয়ে দেখতে পান পাথরের ওপর একটি লাশ ভেসে আছে। তারা ঐ লাশ বটতলীতে এনে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে দাফন করে। যেখানে তাঁর লাশ দাফন করা হয় সেখানে এখন তাঁর পবিত্র মাজার শরীফ গড়ে উঠেছে। তিনি যে পাথর খন্ড করে ভেসে এসেছিলেন তা এখনও পর্যন্ত তাঁর পবিত্র মাজার শরীফে সংরক্ষিত আছে। এই পাথরটিকে অলৌকিক পাথর বলা হয়। এই পাথর থেকে সারা বছর ধরে পানি ঝরে। এই পানি ভক্তরা নিয়ত করে পান করেন রোগ মুক্তির জন্য। মহান বুজুর্গ অলী হযরত শাহ মোহসেন আউলিয়া (রহ.) এর পবিত্র মাজার শরীফে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত আসেন তাদের স্ব স্ব মনোবাসনা নিয়ে। আল্লাহর অশেষ কৃপায় এবং এই মহান বুজুর্গের উসিলায় প্রত্যেকের মনোবাসনা পূর্ণ হয়। কথিত আছে জঠিল, কঠিন রোগ থেকে মুক্তির জন্য ভক্তরা
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মির্জা মো. হাছান জানান, হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.)’র ওরশ উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা ও যানজট নিরসনে আনোয়ারা থানার পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবে।