সাদ্দাম, গাদ্দাফির পর টার্গেট এবার শেখ হাসিনা?

কামরুল হাসান বাদল কবি সাংবাদিক লেখক,

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা বাইডেন প্রশাসনের বাংলাদেশ নিয়ে বদ নিয়ত ততই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। তাদের সামপ্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত দেখে মনে হচ্ছে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য তারা আদাজল খেয়ে নেমেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক কারণে আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী। তাদের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু সংবিধানে সমাজতন্ত্রকে সন্নিবেশিত করেছিলেন এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে পরীক্ষিত বন্ধুরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি‘ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা নিক্সন–কিসিঞ্জার প্রশাসন শুরু থেকে বঙ্গবন্ধু, তাঁর সরকার তথা স্বাধীন বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান নিয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধের পর প্রবল খাদ্য সংকটের সময়ে ১৯৭৪ সালে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে খাদ্য জাহাজ বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশকে গভীর সংকটে নিক্ষেপ করেছিল। তাতে দুর্ভিক্ষাবস্থা নেমে এসেছিলো এর ফলে দেশে বঙ্গবন্ধুর নিন্দিত হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সরকার খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলো। অবশ্য এ কাজগুলো সবই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একা করেনি, এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী সামপ্রদায়িক শক্তি, প্রতিবিপ্লবী রাজনৈতিক দল, তৎকালীন চীনপন্থী বামদল এবং কিছু গোপন পার্টি অতি নিষ্ঠার সঙ্গে সহযোগিতা করেছিল। সে সময় কিছু তথাকথিত নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও সংগঠন, কিছু সংবাদপত্র মার্কিনীদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে। এই শক্তির সবচেয়ে বড় যে অপকর্মটি ছিল তাহলো এক নিরপরাধ, মানসিক প্রতিবন্ধী নারী বাসন্তির জালপরা ছবি প্রকাশ করা।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পরেও পরিস্থিতি অবলোকন করে অনুধাবন করতে কষ্ট হচ্ছে না যে, স্বাধীনতা পরবর্তীকালের সেই পরিস্থিতিই তৈরি করা হচ্ছে। এবং তার নেপথ্যেও সচেষ্ট হয়েছে সেই রাষ্ট্রটি। আর তা সংগঠনে এগিয়ে এসেছে তেমন কিছু রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী, তথাকথিত নিরপেক্ষ সুশীল সমাজ এবং কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। বাসন্তীর ছবি ছাপিয়েছিল সে সময়ের প্রভাবশালী পত্রিকা যেটিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে মনে করা হতো। এখনো সকল ষড়যন্ত্রের শিরোমনি হয়ে আছে আপাতদৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে মনে করা প্রভাবশালী একটি দৈনিক।
প্রতিবার নির্বাচন ঘনিয়ে এলে মার্কিন সরকার তৎপর হয়ে ওঠে একটি বিশেষ দল ও গোষ্ঠীর পক্ষে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশীদের জন্য তারা আলাদা একটি ভিসানীতি ঘোষণা করেছে এবং তারপর থেকে তারা লাগাতার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এমনকি তারা আমাদের শ্রম আইন কী ধরনের তা–ও জানার চেষ্টা করেছে। এরমধ্যে ৬জন কংগ্রেসম্যান খুব তৎপর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ নিয়ে। এই ৬ জন ইতিমধ্যে একটি চিঠি দিয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে। সে চিঠিতে দাবি করা হয়েছে যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে। সে চিঠির প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করেছে ‘সেকুলার সিটিজেন, বাংলাদেশ নামক একটি সংগঠন সম্মেলনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সংখ্যা কমে আসা নিয়ে ৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠির তথ্য মিথ্যা এবং বাস্তবতা বিবর্জিত বলে মন্তব্য করে সেই চিঠি প্রত্যাখ্যান করেছে সেকুলার সিটিজেন বাংলাদেশ। সংগঠনটির নেতারা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে গত ১৭ মে লেখা এক চিঠিতে দেশটির ছয়জন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে যেভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করেছেন তা দেখে আমরা বেশ আতঙ্কিত ও হতবাক।
১২ জুন সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেই চিঠি প্রত্যাখ্যানের কথা জানান সেকুলার সিটিজেন বাংলাদেশের আহ্বায়ক ব্যারিষ্টার তাপস কান্তি বল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কাছে পাঠানো এক ইমেইলে সেকুলার সিটিজেনস বাংলাদেশের সদস্যরা দাবি করেছেন যে, মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের উল্লিখিত চিঠিটি পক্ষপাত দুষ্ট এবং সংখ্যালঘুর সংখ্যা কমানোর বিষয়ে ইতিহাস বিকৃত করে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করা হয়েছে।
পাশাপাশি খ্রিস্টান সমপ্রদায়ের মানুষও একইভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সেখানে উল্লেখ করা হয়নি যে, বিএনপি–জামায়াতের শাসনকাল অর্থাৎ বিগত ২০০১–২০০৬ সালে তাদেরই নেতৃত্বে দেশের বিভিন্নস্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও এই জোটের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলেও সংঘটিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে কোনো আলোচনাই করেননি এই কংগ্রেসম্যানেরা, যার বিষয়ে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশনের রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘কংগ্রেসম্যানেরা এই চিঠিতে গত এক দশকে হিন্দু ধর্মীয় শারদীয় দুর্গা পূজার সংখ্যা সামগ্রিকভাবে সারা বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেননি। বিএনপি–জামায়াত সরকারের ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষের কারণে, সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের মেধাবী তরুণেরা সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়ে চাকরি পাননি। একইভাবে, যারা তখন সরকারি চাকরিতে ছিলেন তারা বিভিন্নভাবে তাদের ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়ের কারণের প্রোমোশনসহ বিভিন্ন অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছে। ‘
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘বর্তমান সরকারের সময়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সমপ্রদায়গত পরিচয় ভুলে গিয়ে যোগ্যতা ও মেধার সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে সকলের সরকারি চাকরি করার অধিকার এবং পেশাগত সুবিধা লাভের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে– এই বিষয়গুলো মার্কিন কংগ্রেসম্যানরা তাদের বিবেচনায় নেননি।‘
ব্যারিষ্টার তাপস কান্তি বল আরও বলেন, ‘মনে রাখা উচিত যে, ১৯৭৫ সালের পরে বাংলাদেশের সংবিধানের অসামপ্রদায়িক চরিত্র হরণ করা হয়েছিল; সংবিধানের সেই অসামপ্রদায়িক চরিত্র কিছুটা হলেও এই সরকার ফিরিয়ে এনেছে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। আমরা সকলেই জানি, নির্বাচন আসলেই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সমপ্রদায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কংগ্রেসম্যানদের উচিত এবারের নির্বাচনে ধর্মীয় ও জাতিগত সমপ্রদায়গুলোকে নিরাপত্তা প্রদানের জন্যে সরকারকে উৎসাহিত করা।‘
এই সংবাদ সম্মেলনের প্রায় পুরোটা তুলে দেওয়ার কারণটি হচ্ছে কংগ্রেসম্যান, প্রকৃত অর্থে যাঁরা বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক শক্তির লবিস্ট হিসেবে কাজ করছেন তাঁদের বক্তব্যের জবাবে এ কথাগুলোই লিখতাম। তবে এর সঙ্গে যোগ করতাম, বাংলাদেশে এখন অন্তত সরকার বা সরকারি দলের পক্ষ থেকে কোনো সামপ্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয় না। দেশের প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। এই উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বেশি। তবে সে সঙ্গে এটাও উল্লেখ করতে চাই যে, এই সরকারের আমলে কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর পেছনের কারণ খুঁজতে গেলে ঘটনার সঙ্গে সামপ্রদায়িক শক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে। হয়ত তাদের কেউ কেউ সরকারি দলে ঘাপটি মেরে থাকে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে কোণঠাসা করার জন্য আরও একটি পদক্ষেপের সংবাদ জানা গেল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) তৎপরতায়।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছে, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় যাচাই–বাছাইয়ের। জাতিসংঘের এই কর্মকর্তার শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে।
সোমবার ওয়েবসাইটে দেওয়া এইচআরডব্লিউর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ল্যাক্রোইক্স এমন সময়ে বাংলাদেশ সফর করছেন, যখন সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দেশটির রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন–পীড়ন চালাচ্ছে এবং বিভিন্ন অধিকারকর্মী, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হয়রানি করছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাবাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ সফরকালে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের খোলাখুলি উদ্বেগ জানানো উচিত।
এইচআরডব্লিউ বলছে, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান সবচেয়ে বেশি। এই অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের মানবাধিকার–সংক্রান্ত যাচাই–বাছাই নীতিমালা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, জাতিসংঘের হয়ে কাজ করা তাদের কোনো নাগরিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত নয়। সফরকালে জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সে এই নীতিমালার ওপর জোর দিতে হবে।
এইচআরডব্লিউ যে তথা দিচ্ছে তা কি পুরোপুরি সত্য? বাংলাদেশে কি এমন দমন–পীড়ন চলছে? বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের হয়রানি করছে নাকি রোহিঙ্গারাই সরকার থেকে শুরু করে পুরো জাতিকে হয়রানি করছে? আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এই এইচআরডব্লিউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইবুনালের বিপক্ষে কীভাবে অবস্থান নিয়েছিল। সে কথা যদি আমরা ভুলেও যাই সমস্যা নেই। বিরোধীদলের ওপর দমন–পীড়ন, মানবাধিকার ক্ষুণ্‌ন হওয়ার মতো ঘটনা কি বাংলাদেশে পাকিস্তানের চেয়ে বেশি হচ্ছে? গত কয়েকমাস ধরে পাকিস্তানে যেসব ঘটনা ঘটছে তার ধারেকাছেও কি আছে বাংলাদেশের অবস্থান। সেখানে এইচআরডব্লিউ নীরব কেন? সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা কেন? দুই দেশের জন্য মার্কিনীদের দুই নীতি কেন? এইচআরডব্লিউ কি সেখানেই মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হয় যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরব হয়?
বাংলাদেশে মত প্রকাশের অপরাধে ড. হুমায়ুন আজাদকে নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করে আহত করা হয়েছিল যে কারণে পরে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। লেখক–ব্লগার, মুক্তচিন্তক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছিল। সে সঙ্গে মত প্রকাশের অপরাধে একে একে হত্যা করা হয় আহমেদ রাজিব হায়দার, শফিউল ইসলাম, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলয় চ্যাটার্জি, ফয়সল আরেফিন দীপন, নাজিমুদ্দিন সামাদসহ অনেককে। হলি আর্টিজান বেকারিতে এক রাতে দেশি–বিদেশি কুড়ি ব্যক্তিকে হত্যা করে জঙ্গিরা। মত প্রকাশে বাধার কথা বলতে গেলে আগে উগ্র ও জঙ্গিবাদীদের কথা উল্লেখ করতে হবে। আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জোর করে যে রাজনৈতিক শক্তিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়ে দিতে চায় সে রাজনৈতিক শক্তির সহায়ক ও সৃষ্ট সেই উগ্রবাদী শক্তি। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে কীভাবে গণতন্ত্র হত্যাকারী, চরম অসহিষ্ণু মৌলবাদীদের ক্ষমতায় আনতে চায় গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী রাষ্ট্র ও মানবাধিকার রক্ষাকারী সংগঠনটি?
মার্কিনীদের এই নীতি আমরা দেখেছি কয়েকবছর আগেও। তাদের কাছে যাকে আপোষহীন মনে হবে, দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী মনে হবে, নিজ দেশের জন্য বিকল্পহীন মনে হবে তাদের নিশ্চিহ্ন করাই মার্কিনীদের কাজ। অনতিদূরের উদাহরণ হলো ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, লিবিয়ার গাদ্দাফি। সিরিয়ার আসাদকে টার্গেট করা হয়েছিল রাশিয়ার কড়া সমর্থনের কারণে সফল হয়নি। তাদের এবারের টার্গেট হচ্ছেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর মতো বাগে আনতে না পেরে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। এবারও তাদের ফর্মুলা একই। তাদের ‘তথাকথিত গণতন্ত্র‘-এর ধুঁয়া তুলে জনপ্রিয় নেতাদের ক্ষমতাচ্যুত করে, প্রয়োজনে হত্যা করে তাদের বশংবদ দল ও ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসানো। এটা করতে গিয়ে সমৃদ্ধ দেশগুলো ধ্বংস হয়ে গেলেও তখন কিছুই করার থাকে না কারো। যেমন ইরাক, যেমন লিবিয়া, যেমন আফগানিস্তান।
এ রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংস করার আগে কোনো না কোনো অজুহাত তৈরি করেছিল তারা। তাদের অজুহাত অনেকটা সেই বাঘের মতো। গল্পটি সবারই জানা। নদী থেকে পানি পান করছিল একটি বাঘ। হঠাৎ সে দেখতে পেল, নিচের দিকে একটি হরিণও পানি পান করছে। বাঘ বলল, তোর কেমন সাহস! আমার পানি ঘোলা করলি। হরিণ ভয়ে ভয়ে বলল, হুজুর আমি আপনার পানি কীভাবে ঘোলা করব? আমি তো ভাটিতে, আপনি উজানে। বরং আপনার ঘোলা পানিই আমার দিকে আসছে। তুই করিসনি তাহলে তোর বাপে করেছে বলে হরিণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঘ। আসলে বাঘের একটি অজুহাতের দরকার ছিল।
লেখক : কবি–সাংবাদিক।