একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করা দেশগুলো আবারও বাংলাদেশকে নিয়ে খেলতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশি খেলোয়াড়দের খেলতে দেয়া যাবে না।’মঙ্গলবার রোমের পার্কো দ্য প্রিন্সিপি দ্য গ্র্যান্ড হোটেলে ইতালি আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন
নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকার সব ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতকিছুর পরও কেউ কেউ নিষেধাজ্ঞা দেয়। তাহলে সন্ত্রাসটা কে তৈরি করছে? তারা নাকি ভিসাতেও নিষেধাজ্ঞা দেবে। যেসব দেশ আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, তারাই এখন বাংলাদেশ নিয়ে খেলতে চায়। সেই খেলোয়াড়দের খেলতে দেয়া যাবে না। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দেশ থেকে টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে। তাই আজকে বিদেশে বসে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে বেড়াচ্ছে।’
ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাওয়া বিএনপিকে দেশের মানুষ আর অশান্তি সৃষ্টির সুযোগ দেবে না- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কাজই হলো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। বিএনপির রাজনীতি মানুষকে কষ্ট দেয়া আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি জনগণের মঙ্গলে কাজ করা।’
আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি তো নির্বাচনই করেনি। তারা আবার ভোটের অধিকারের কথা বলে। ২০১৮ এর নির্বাচনে তাদের প্রতি আসনে দুই-তিন জন করে দাঁড়িয়েছিল। যে যতো টাকা দিয়েছে তাকেই নমিনেশন দিয়েছে। এরপর নিজেদের মধ্যেই গোলমাল। এরপর তারা আবার নির্বাচন বর্জন করল। তাহলে কারচুপির প্রশ্নটা এলো কোথা থেকে?’
‘বিএনপি শুধু পারে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ তাদেরকে সংসদে কথা বলতে বাধা দেয়া হয়নি। আমাদেরকে তো কথাই বলতে দেয়া হতো না।’
‘ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করতে চাওয়া বিএনপিকে সরকারই আন্দোলন করার সুযোগ দিয়েছে বলে মন্ত্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে নাকি ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করবে। বিএনপিকে ছেড়ে দিয়েছি, দেখি তাদের আন্দোলনের কত জোর? আমরা তো তাদের বাধা দিচ্ছি না।
বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় আমাদের তো নামতেই দিতো না।’
বিএনপি দেশকে কিছুই দিতে পারেনি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে অনেকের চক্ষুশূল হয়। সবাই দেশের সক্ষমতা পছন্দ করে না। বিএনপি দেশকে কিছুই দিতে পারেনি, আমরা গড়ি, তারা ধ্বংস করে।’
এসময় নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপির অবরোধ এখনো চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকা মার্কাকেই বিজয়ী করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই দেশ আজ উন্নয়নের এই স্তরে এসেছে।’
এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে আগামী নির্বাচনেও নৌকা মার্কাকেই বিজয়ী করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইতালি। বাংলাদেশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, এলএনজি এবং বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়তা দিতে সম্মত
হয়েছে দেশটি।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ইতালি।’
ইতালিতে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের রোম-ঢাকা সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়েও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘তবে খেয়াল রাখবেন একটি আসনও যেন ফাঁকা না যায়।’
অবৈধপথ এড়িয়ে দক্ষতা অর্জন করে বৈধপথে বিদেশ যেতে প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। আপনারা কারিগরি শিক্ষা নিয়ে বৈধ পথে কোনো প্রকার দালাল ছাড়াই বিদেশে যেতে পারবেন।’
‘আমরা শিগ্রই ইতালিয়ান ভাষাসহ বিভিন্ন দেশের ভাষা শিক্ষা কোর্সের ব্যবস্থা করব যাতে করে যে যে পেশায় দক্ষ তার পাশাপাশি ভাষা শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করে বিদেশে যেতে পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশ যেতে কাউকে বাড়ি জমি বিক্রি করতে হবে না। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কোনোন প্রকার জামানত ছাড়াই দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে এবং বিদেশ থেকে কেউ দেশে ফিরে গেলে তাদেরও ঋণ দিয়ে থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যারা রেমিট্যান্স পাঠান বৈধভাবে পাঠাবেন। সরকার আপনাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ২.৫ ভাগ প্রণোদনা দিয়ে থাকে। আপনারা কেউ হুন্ডিতে টাকা পাঠাবেন না।’
তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের জন্য অ্যাকাউন্ট খুলতে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের প্রয়োজন নেই। প্রবাসীরা শুধুমাত্র পাসপোর্ট দিয়েই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।’
ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধাণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনের পরিচালনায় মঞ্চে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এবং ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত আওয়ামী লীগের নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।