জীবনমুখী গানের স্রষ্টা সৈয়দ মহিউদ্দিন ভাল নেই

জীবনমুখী গানের স্রষ্টা খ্যাত সৈয়দ মহিউদ্দিনের কথা। যিনি ‘অ জেডা ফইরার বাপ’সহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় আঞ্চলিক, আধুনিক ও মাইজভাণ্ডারী গানের গীতিকার এবং সুরকার।
এখন কঠিন জীবন সংগ্রামে আছে তিনি। দুর্ঘটনায় হাটার শক্তি হারিয়ে নির্ভর হয়ে পড়েছেন কালামিয়া নামের এক মানবিক গরীবের উপর। শুলকবহরে এক বিল্ডিং এর দারোয়ান কালামিয়ার তত্ত্বাবধানে থাকেন তার ঘরে। সেবা যত্ন থেকে খাওয়া দাওয়া সবই এনে দেন দারোয়ান। বিনিময়ে কালামিয়াকে দেন যৎসামান্য। যা তার আন্তরিকতা আর মানবতার কাছে কিছুই না।

  সৈয়দ মহিউদ্দিনের মুখে বলেন তাঁর থেকে সুখী মানুষ এ জগতে নেই। বাস্তবে দেখলে প্রশ্ন জাগবে, আসলেই কী তিনি সুখী?
চলৎশক্তিহীন মানুষটি থাকেন একটি ভবনের নিচতলায় মিটার কক্ষে। মেঝে বালিতে গিজগিজ। কোনায় ঝুলছে মাকড়শার জাল। বিছানা বলতে কোনরকম কাঠের পাটাতন। আছে কয়েকটি প্লাস্টিকের বাটি। প্রাণের সুর বাঁধার হারমোনিয়ামটিও আছে অযত্নে।
গত রাতে গিয়েছিলাম এই সাধকের ডেরায়। রুমে ঢুকতেই চোখ আটকে যায়। মনে প্রশ্ন, এমন গিজগিজ, গা ঘিনে উঠা রুমে থাকেন কি করে।
সাথে ছিলেন পূর্বকোণের ফটোসাংবাদিক আলতাফ। আলতাফও অবাক।
গুরুর সাথে কুশল বিনিময়ের পর জমে উঠে আড্ডা। চলৎশক্তি না থাকলেও বলতে পারেন গরগর করে। বললেন নানাকথা। জানালেন গ্রামের বাড়ি সুয়াবিলের সৈয়দ পাড়া ছাড়ার কথা। বাড়ির কাছের স্বজনদের নিয়ে অভিমানের কথা। ভুলেননি, কুমিল্লার সেই সুন্দরীকেও। যার প্রেমে মজে ছিলেন কিছুদিন। উভয়ে উভয়কে পছন্দ করলেও কেউ কাউকে জানাতে পারেননি মনের কথা। এখনও সযতনে আগলে রেখেছেন সেই স্মৃতি। দেখালেন নিজের আঁকা সেই প্রেমিকার ছবিও। শোনালেন ‘অ জেডা ফইরার বাপ’সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় গান রচনার প্রেক্ষাপট।
ঘণ্টা দেড়েক আড্ডা শেষে ফেরার পথে জিজ্ঞেস করলাম এ জীবন কেমন লাগে? বললেন, আমি সুখী, আমার চেয়ে সুখী কেউ নেই। আমার গান আর আমাকে মানুষ ভালবাসে-এটাই আমার পরম পাওয়া।
সৈয়দ মহিউদ্দিনের বুক ভরা তৃপ্তি থাকলেও বাস্তবে দেখলে বুঝা যায় তিনি আসলেই ভাল নেই। অপারেশনের জন্য প্রয়োজন প্রায় ১০ লাখ টাকা। প্রয়োজন তাঁর জন্য উপযুক্ত আশ্রয়। এমন কেউ কি নেই তাঁর পাশে দাঁড়ানোর?
লেখক সাংবাদিক কাজী মহসিন