লেবাননে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় দশ লাখের বেশি লোক বাস্তুচ্যুত

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেন, ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলার কারণে দেশজুড়ে দশ লাখের মতো মানুষ ইতোমধ্যেই ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেছেন, এটাই সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা। খবর বিবিসির।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ হত্যার দুই দিন পর রোববারেও বিমান হামলায় ১০০ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে আরও রকেট ছুড়েছে।
ওদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুথিদের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ‘বড় ধরনের’ বিমান হামলা চালিয়েছে। রোববার হিজবুল্লাহ তাদের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার আলী কারাকি এবং একজন সিনিয়র ধর্মীয় নেতা শেখ নাবিল কাউক ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চীফ অফ স্টাফ হারজি হালেভি বলেন, হিজবুল্লাহকে আমাদের কঠিনভাবে আঘাত করা দরকার। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেন, বিমান হামলার কারণে বৈরুত ও দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালতে বাধ্য হচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তার দেওয়ার ক্ষেত্রে সংগ্রাম করছে। আশ্রয় শিবির ও হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে বলে লেবানন থেকে বিবিসির প্রাপ্ত তথ্যে
২৫ বছর বয়সী আয়া আয়ুব বিবিসিকে বলেন, তাদের ছয় সদস্যের পরিবারের সঙ্গে তাকে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় তাহউিইটেট আল ঘাদির শহরতলির বাড়ি ছাড়তে হয়েছে কারণ সেখানে অবস্থান করাটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল।
তার বাড়ির আশেপাশে ‘সব ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে’ এবং তিনি এখন বৈরুতের আরেকটি বাড়িতে আরও ১৬ জনের সঙ্গে অবস্থান করছেন।
তিনি বলেছেন, আমরা শুক্রবার ছেড়ে আসি এবং যাওয়ার কোন জায়গা ছিল না। রাত দুটা পর্যন্ত রাস্তায় ছিলাম। এরপর এক দল ব্যক্তি আমাদের সহায়তা করে একটি নির্মাণাধীন আবাসিক ভবনে নিয়ে আসে। রাতে মোমবাতি নিয়ে বাস করতে হচ্ছে। খাবার ও পানি আনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।
৩৪ বছর বয়সী সারা তোহমাজ পেশায় সাংবাদিক। বিবিসিকে তিনি বলেছেন যে তাকে গত শুক্রবার বৈরুতের কাছে তার বাড়ি থেকে তার মা ও দুই সহোদরসহ বেরিয়ে আসতে হয়েছে। তিনি জানান, গাড়িতে সিরিয়া হয়ে তাদের জর্ডানে আসতে দশ ঘণ্টা সময় লেগেছে।
তিনি বলেছেন, আমি মনে করি আমরা ভাগ্যবান যে জর্ডানে আমাদের থাকার মতো জায়গা আছে। সেখানে মায়ের দিকে আত্মীয়রা আছে। পরে কী হবে আমরা জানি না এবং আবার কখন ফিরতে পারবো তাও জানি না।
এর আগে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর আন্তঃসীমান্ত লড়াই বেড়ে গিয়েছিল। হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর তখন ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছুড়েছিল। এরপর থেকে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাসহ শত শত মানুষ মারা গেছে এবং উভয়পক্ষে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
রোববার ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইয়েমেনে হুতিদের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। সেখান বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও রাস ইসা ও হুদাইদায় বন্দরে হামলা হয়েছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বন্দরে বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়েছে।
ইসরায়েল বলছে হুথিরা সম্প্রতি যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে তার পাল্টা হিসেবে তারা হামলা শুরু করেছে