গত একমাস ধরে সবজির বাজার এমন ঊর্ধ্বমুখি হলেও প্রায় এক সপ্তাহ ধরে লাগামহীনভাবে দাম বেড়েছে সব সবজির। ফলে নাভিশ্বাস উঠেছে নগরবাসীর।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫-২০ টাকা। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারন মানুষজন। বন্যা অতিবৃষ্টির কারণে সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা সবজিও এখন নাগালের বাইরে চলে গেছে। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবী মানুষ ভাতের সঙ্গে একটু সবজি পেলেই খুশি হতো। কিন্তু দেশের উত্তরাঞ্চলসহ ৩৭টি জেলায় টানা চার দফা বন্যায় সেই ভরসাটুকুও এখন নেই।কারণ, বন্যায় সবজিক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সবজির দাম এখন আকাশছোঁয়া। শুধু শ্রমজীবী মানুষ কেন? স্বল্প আয়ের মানুষের কাছেও সবজি কেনা এখন ‘বিলাসিতার’ মতো। পেঁপে, কচুর লতি আর কচুর মুখি ছাড়া ৬০ টাকার নীচে কোনো সবজি নেই। কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। অথচ এক-দেড় মাস আগেও ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে প্রায় সব ধরনের সবজি পাওয়া যেত। এদিকে গত সপ্তাহেও চালের দাম একদফা বেড়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে চার দফা বেড়েছে চালের দাম।
করোনা সংকটের এই সময়ে যখন মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে, ঠিকমতো বেতন-ভাতা পাচ্ছে না। তখন সবজির এই ‘আগুন’ দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ক্রেতারা। দাম বেড়েছে ডিমেরও। এ ছাড়া চলতি বছরেই তিন দফা বেড়েছে চালের দাম। সবমিলিয়ে ভালো নেই স্বল্প আয়ের মানুষ।
গত সোমবার বাজারে বড় সাইজের আলু বিক্রি হয়েছিল ৫০ টাকায় কিন্তু আজ তা আরও ৩-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে। ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়, টমেটো ১৩০ টাকায়, গাজর ১১০ টাকায়, শিম ১২০ টাকায়, বেগুন ১২০ টাকায়, পটল ৭০ টাকায়, বরবটি ৮০ টাকায়, তিতাকরলা ৬০ টাকায়, পেঁপে ৫০ টাকায়, লাউ ৫০ টাকায়, কচুর ছড়া ৫০ টাকায়, ফুলকপি ১৪০ টাকায়, বাঁধাকপি ১১০ টাকায় ও শসা বিক্রি হচ্ছে ১শ’ টাকায়। এছাড়া বাজারে কিছু শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। ক্রেতাদের অভিযোগ, তিনদিন আগের চেয়ে কেজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা করে দাম বেড়েছে প্রতিটি সবজির।
দেশের উত্তর বঙ্গ থেকে সবজি আসতে না পারার একমাত্র কারণ হলো বন্যা। তবে দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে কিছু সবজি আসলেও তা বৃষ্টির কারণে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানালেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বেশ কয়েকজন কৃষক। তারা বলেন, টানা অতিবৃষ্টির ফলে চাষের সবজি নষ্ট হয়েছে বেশ কয়েকবার। তাই জমিতে আশানুরূপ সবজির ফলন হয়নি। এসব কারণে আমরাও শহরে সবজি পাঠাতে পারছি না।
সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শাকের দামও বেশি। পুঁই শাক ও লাল শাকের একটা ছোট্ট আটি (এক মুঠো) বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। লাউ, কুমড়ো প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।শাকসবজির পাশাপাশি ডিমের দামও বেড়েছে। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগেও ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় পাওয়া যেত।স্বল্প আয়ের মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলেছে চালের দামও। গত সপ্তাহেও আরো এক দফা বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি চালে ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা, মাঝারিমানের চাল পাইজাম/লতা ৪৮ থেকে ৫৪ টাকা ও সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট ৫৫ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেশে চাহিদার তুলনায় চালের পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও একটি চক্র সিন্ডিকেট করে বারবার চালের দাম বাড়াচ্ছে। মহামারি করোনা ও বন্যার অজুহাতে এই চক্র সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রী এই চক্রের কথা স্বীকার করলেও চালের বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করা যাচ্ছে না।