রাতের বেলায় ছদ্মবেশে বিভিন্ন থানায় থানায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি কখনো নিজের প্রাইভেট কারে আবার কখনো অটোরিকশায় চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার কখনো কখনো প্রটোকলকে না জানিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। এসময় থানায় গিয়ে সরাসরি ওসির বা ডিউটি অফিসারের কক্ষে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন আবার কখনো ছদ্মবেশেই একজন সাধারণ সেবা প্রত্যাশী সেজে থানায় যাচ্ছেন। এ সময় পুলিশ সদস্যদের কোনো অনিয়ম বা দায়িত্বে অবহেলা নজরে এলে পরদিন গোপন অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরোপ করেন সাময়িক বরখাস্ত ও তিরস্কারের মতো শাস্তি। গত ৭ সেপ্টেম্বর সিএমপিতে যোগ দিয়েই পরের মাস (অক্টোবর) থেকে গোপনে এ কার্যক্রম চালাচ্ছেন তিনি। সিএমপি পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা সিএমপি কমিশনারের ছদ্মবেশ ধারণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ছদ্মবেশে থানার কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শনের কথা স্বীকার করলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পুলিশ কমিশনার তানভীর। তিনি বলেন, এটা আমি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত করছি। দেখা যাক কতদূর করতে পারি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করা উচিত হবে না। এছাড়া এ বিষয়ে বলার মতো কিছু নেই বলেও জানান তিনি।
সিএমপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশ কমিশনার রাতে বিভিন্ন থানায় গিয়ে গোপনে পুলিশ সদস্যদের কর্মকান্ড অবলোকন করছেন। পরে দোষীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তি আরোপ করছেন। এটা বেশকিছু দিন ধরে চলে আসছে।
জানা গেছে, কিছুদিন আগে সেবাপ্রার্থী সেজে ছদ্মবেশে নগরীর চান্দগাঁও থানায় যান সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। এ সময় ওসির রুমে প্রবেশ করে থানার রেজিস্ট্রার যাচাই করেন। সেখান থেকেই ফোন করেন ওই জোনের ডিসিকে। জানতে চান হাজতে থাকা আসামির পরিসংখ্যানসহ রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ নানা তথ্য। পরে চান্দগাঁও থানা থেকে দ্রুত চলে যান অঙিজেন মোড়ে। সেখানে রাত্রিকালীন চেকপোস্টের কার্যক্রম দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। এক পর্যায়ে চেকপোস্টে হাজির হয়ে নিজের পরিচয় প্রকাশ করে ওই জোনের এসিকে ঘটনাস্থলে হাজির করেন। এর আগে ছদ্মবেশী পুলিশ কমিশনার অটোরিকশায় করে গিয়েছিলেন ডবলমুরিং থানায়। সেখানে গিয়ে রাত ১০ টার দিকে ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসারের কাছে একটি জিডি করার ‘অনুরোধ’ করেন। তখন কর্তব্যরত অফিসার জিডি করতে ‘বকশিস’ চেয়েছেন। এ সময় কমিশনার ঘটনাস্থলে কিছু না বলেই ডবলমুরিং থানা ত্যাগ করে পাহাড়তলী থানায় যান। সেখানে নিজের মত করে পরিদর্শন করে থানার গেটে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলকে বাসায় ফেরার জন্য একটি সিএনজি অটোরিকশা ডেকে দেওয়ার ‘অনুরোধ’ করেন। কিন্তু ওই পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে তিনি কাঙ্খিত সেবাটি পেলেন না।
রাতে এই ধরণের ছদ্মবেশে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন কয়েকজন এসি ও ওসিকে তিরস্কার করেন সিএমপি কমিশনার। আর জিডি করতে ‘বকশিস’ চাওয়া ওই এসআই ও অসহযোগিতা করা পুলিশ কনস্টেবলকে তাৎক্ষণিক বরখাস্তের আদেশ দেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, সেবা প্রার্থীরা যাতে বিড়ম্বনার শিকার না হন সে ব্যাপারে এখন বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।