আজ শুক্রবার(১৩নভেম্বর)আগামীকাল যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।আজ সকালে তিনি এ সব কথা বলেন।দেশের রাজনীতিতে যুবলীগের যেমন সুনাম রয়েছে, তেমনি কতিপয় নেতাকর্মীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সেই সুনাম অনেকটা ক্ষুণ্নও হয়েছে। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি, বিভিন্ন হামলা-মামলা, টেন্ডারবাজি ও কমিটি বাণিজ্যের কারণে গত বছর বেশ আলোচনায় আসে যুবলীগ। ফলে ভেঙে দেওয়া হয় যুবলীগের কমিটি।এতে যার হাত দিয়ে গড়ে উঠেছিল যুবলীগ, সংকটে পড়ে উদ্ধার পেতে সেই শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশকে তোড়জোড় করে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠনের চেয়ারম্যান করা হয়। একই সঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান মাইনুল হোসেন খান নিখিল। তবে সম্মেলনের পর প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
সূত্র জানায়,পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি তালিকা চূড়ান্ত করে যুবলীগের শীর্ষ দুই নেতা সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিতে যান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিটির পরিধি বড় করা, বিতর্কিত কাউকে না রাখাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।ক্যাসিনোসহ অন্যান্য কালিমা মুছে মূল আদর্শে ফিরতে চায় যুবলীগ। আর সে উদ্দেশ্যেই পরিচ্ছন্ন ইমেজের দক্ষ ও অভিজ্ঞ তরুণেরা এবার কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা হতে যাচ্ছেন। তবে জেলা পর্যায়েরয়েক জনকেও নিয়ে আসা হচ্ছে কেন্দ্রে। নতুন মুখ হিসেবে দুই জন জনপ্রিয় সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হতে যাচ্ছেন। ২০টি পদ বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির আকার হচ্ছে ১৭১ সদস্যের। সাংগঠনিক জরিপ রিপোর্ট, একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন—সবকিছু খতিয়ে দেখেই প্রধানমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেবেন।
ইতিমধ্যে কয়েক দফায় পদপ্রত্যাশীদের বায়োডাটা যাচাইবাছাই সম্পন্ন করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা। এদিকে যে কোনো সময় কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ সারা দেশে যুবলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ সব শাখা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এক্ষেত্রেও থাকবে শুদ্ধি অভিযান। জেলা-উপজেলা শাখা থেকে বাদ পড়বেন মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত, চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ এবং মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতনকারীরা।
প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মণির নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক যুব কনভেনশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে যুবলীগ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আদলে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংগঠন। গত চার দশকের বেশি সময় ধরে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও হাজারো নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে যুবলীগ আজ দেশের সর্ববৃহত্ যুব সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ পূরণে আগ্রহী নেতাদের জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দিতে বলা হয়েছিল সাত মাস আগেই। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রায় দেড় হাজার সিভি জমা পড়ে। সেই সিভিগুলো যুবলীগের শীর্ষ দুই নেতা ব্যাপকভাবে যাচাই করেন। প্রত্যেকের নিজ এলাকায় বিভিন্নভাবে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। তাদের অতীত ব্যাকগ্রাউন্ডও নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার যুবলীগের কমিটিতে চমক থাকবে। দেশব্যাপী জনপ্রিয় বেশ কয়েক জনকে এবার দেখা যাবে। জেলা যুবলীগের সফল নেতারাও কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন। ছাত্রলীগের সাবেক ত্যাগী নেতারাও যুবলীগের কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সফল নেতারাও এই তালিকায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। আগের কমিটির শীর্ষ এক নেতা অর্থের বিনিময়ে যখন যাকে ইচ্ছা কেন্দ্রীয় কমিটির পদ দিতেন। আর পদপ্রাপ্তির খবরটি সংশ্লিষ্ট নেতাকে তিনি জানিয়ে দিতেন মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে। সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত নেতারা টাকার বিনিময়ে পদপ্রাপ্তদের ডাকতেন এসএমএস কমিটির নেতা বলে। শুদ্ধি অভিযানে শীর্ষ ঐ নেতা বাদ পড়ার পর এসএমএস কমিটির ঐ সব নেতা যুবলীগের কেন্দ্রীয় পদ পেতে মরিয়া হলেও তারা এবার পদ পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।