আজ বৃহস্পতিবার(১৯নভেম্বর) একুশে পদকপ্রাপ্ত ও দেশ বরেণ্য জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীর জন্মদিন।প্রয়াত এই শিল্পী ১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় নন্দীপাড়া নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত সঙ্গীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
সুবীর নন্দী হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় নন্দী পাড়া নামক মহল্লায় এক সম্ভ্রান্ত সঙ্গীত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।।তার নানা বাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাদেআলিশা গ্রামে. তার পিতা- সুধাংশু নন্দী ছিলেন একজন চিকিৎসক ও সঙ্গীতপ্রেমী। তার মা পুতুল রানী চমৎকার গান গাইতেন কিন্তু রেডিও বা পেশদারিত্বে আসেন নি।সুবীর নন্দী ছিলেন একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী। তিনি মূলত চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। চলচ্চিত্রের সঙ্গীতে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি ভাই-বোনদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিতে শুরু করেন ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে। তবে সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই।বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশবকাল চা বাগানেই কেটেছে। পাঁচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত বাগানেই ছিলেন। চা বাগানে খ্রিস্টান মিশনারিদের একটি স্কুল ছিল, সেখানেই পড়াশোনা করেন। তবে পড়াশোনার অধিকাংশ সময়ই তার কেটেছে হবিগঞ্জ শহরে। হবিগঞ্জ শহরে তাদের একটি বাড়ি ছিল, সেখানে ছিলেন। পড়েছেন হবিগঞ্জ গভঃ হাইস্কুলে। তারপর হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সুবীর নন্দী সেকেন্ড ইয়ারে পড়তেন।
তিনি মহানায়ক (১৯৮৪), শুভদা (১৯৮৬), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪) ও মহুয়া সুন্দরী (২০১৫) চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে পাঁচবার এই পুরস্কার লাভ করেন।সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালে তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।চলচ্চিত্রে নন্দীর গাওয়া উল্লেখযোগ্য গান হল দিন যায় কথা থাকে, আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়, পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই, আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি, হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে, তুমি এমনই জাল পেতেছ, বন্ধু হতে চেয়ে তোমার, কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো, পাহাড়ের কান্না দেখে, কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়, একটা ছিল সোনার কইন্যা, আমার উড়াল পঙ্খীরে ইত্যাদি
সুবীর নন্দী গানের জগতে আসেন ১৯৭০ সালে ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিং এর মধ্য দিয়ে। প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’ -এর গীত রচনা করেন মোহাম্মদ মুজাক্কের এবং সুরারোপ করেন ওস্তাদ মীর কাসেম। ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন ১৯৭ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত সূর্যগ্রহণ চলচ্চিত্রে। ১৯৮১ সালে তার একক অ্যালবাম “সুবীর নন্দীর গান” ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তিনি গানের পাশাপাশি দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন ব্যাংকে।
নন্দী দীর্ঘদিন ফুসফুস, কিডনি ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। ১৪ই এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ৩০ এপ্রিল তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে ৫ ও ৬ই মে পরপর দুইদিন হার্ট অ্যাটাকের পর তিনি ২০১৯ সালের ৭ই মে ৬৫ বছর বয়সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।