আজ বাইশে শ্রাবণ গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বিশ্বকবিকে স্মরণ


এস,আহমেদ ডেক্স প্রতিবেদনঃ অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে। নির্মল করো, উজ্জ্বল করো, সুন্দর কর হে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট)বাইশে শ্রাবণ। বাঙালির প্রাণের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৯তম মহাপ্রয়াণ দিবস আজ। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ এমনিি এক শ্রাবণ দিনে কবি কলকাতার পৈতৃক বাসভবনে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন বাঙালির প্রাণের কবি বাংলা সাহিত্যের এই প্রাণপুরুষ। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে যার অফুরন্ত অবদান সেই কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ বাঙালীর প্রতিটি আবেগ আর সূক্ষ্ম অনুভূতিকে স্পর্শ করে আছেন তার অসাধারণ সৃষ্টিতে। গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে প্রথম বাঙালি এবং এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। নোবেল ফাউন্ডেশন তার এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি ‘গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ’ রূপে। তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। রবীন্দ্রনাথ শুধু বাঙালির নয় বাংলাদেশ ও ভারত দুদেশের মানুষের কাছেই তিনি মানবমুক্তির বারতা নিয়ে উদ্ভাসিত। দুদেশের মানুষের সম্পর্কে সেতুবন্ধ রচনায় রবীন্দ্রনাথ দেখে দিয়েছেন নতুনতর মহিমায়।রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল কলকাতার এক পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্ম ২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮; মৃত্যু ২২শে শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ। বাংলার দিকপাল কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি প্রথম কবিতা লেখেন। ১৮৮৭ সালে মাত্র ষোল বছর বয়সে ‘ভানুসিংহ’ ছদ্মনামে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক চেতনা ছিল– শুধু নিজের শান্তি বা নিজের আত্মার মুক্তির জন্য ধর্ম নয়। মানুষের কল্যাণের জন্য যে সাধনা তাই ছিল তার ধর্ম। তার দর্শন ছিল মানুষের মুক্তির দর্শন। মানবতাবাদী এই কবি বিশ্বাস করতেন বিশ্বমানবতায়। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেই দর্শনের অন্বেষণ করেছেন। তার কবিতা, গান, সাহিত্যের অন্যান্য শাখার লেখনী মানুষকে আজো সেই অন্বেষণের পথে, তার অন্বিষ্ট উপলব্ধির পথে আকর্ষণ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহুমুখী সৃজনশীলতা বাংলা সাহিত্য ও শিল্পের প্রায় সবকটি শাখাকে স্পর্শ করেছে, সমৃদ্ধ করেছে। তার লেখা গান বাঙালির হূদয়ে প্রতিধ্বনিত হয় আজো। আনন্দে, বেদনায় এমনকি দ্রোহে এখনও রবীন্দ্রনাথ বাঙালির প্রেরণার উত্স। রবীন্দ্রনাথ আমাদের মন-মানস গঠনের, চেতনার উন্মেষের প্রধান অবলম্বন। তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করবে সারাবিশ্বের বাঙালী। কবিগুরুর প্রিয় ঋতু ছিল বর্ষা। অজস্র রচনায় বাংলার বর্ষাকে তিনি অনিন্দ্যসৌন্দর্যে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে প্রিয় ঋতুতেই নির্বাপিত হয়েছিল কবির জীবনপ্রদীপ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবির কিরণের মতোই আপন প্রতিভার আলোয় বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে উদ্ভাসিত করেছিলেন। প্রায় একক প্রতিভায় তিনি বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদাপূর্ণ আসনে। কাব্য, সংগীত, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, শিশুতোষ রচনাসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখা তাঁর প্রতিভার স্পর্শে দীপ্তিমান হয়ে উঠেছিল। তাঁর বৈচিত্র্যময় রচনাসম্ভার মহৎ মানবিক আবেদনের মহিমায় হয়ে উঠেছে কালজয়ী। ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে তিনি লাভ করেন নোবেল পুরস্কার। জীবনের শেষ পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গভীর আগ্রহে চিত্রকলার চর্চা শুরু করেন। তাঁর এসব কাজ ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পকলায় ভিন্ন মাত্রা সংযোজন করেছে। সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি সমাজসংস্কার, শিক্ষাবিস্তার, কৃষি উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মে নিজেকে জীবনব্যাপী সক্রিয় রেখে এক অনন্যদৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে বাংলা একাডেমি দুই দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিকেল চারটায় একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আহমদ রফিক রচিত রবীন্দ্রজীবন (তৃতীয় খণ্ড)-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান। স্বাগত ভাষণ দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। রোববার বিকেলে একক বক্তৃতা, রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ এই সাহিত্যিকের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সঙ্কলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খন্ডে রবীন্দ্ররচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, আধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোমান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা।রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক। সাহিত্যের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের গান বাংলা সঙ্গীত ভান্ডারকে দারুণভাবে সমৃদ্ধ করেছে। আজকের বদলে যাওয়া সময়েও বিপুল ঐশ্বর্য নিয়ে টিকে আছে রবীন্দ্রসঙ্গীত। এর আবেদন যেন কোন দিন ফুরোবার নয়। বরং যত দিন যাচ্ছে ততই রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাণী ও সুরের ইন্দ্রজালে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে বাঙালী। রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জাতীয় সঙ্গীতেরও রচয়িতা তিনি। বহু প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় সত্তর বছর বয়সে নিয়মিত ছবি আঁকা শুরু করেন।
বাঙালির সংস্কৃতি সত্তার বাতিঘর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্ষা ঋতুকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। এই ঋতু নিয়ে তার অসংখ্য কবিতা, গান, ছোট গল্প, প্রবন্ধ রয়েছে। সেই বর্ষাতেই তিনি চির বিদায় নেন এই ধরাধাম থেকে।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৌঁছে দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। বাংলা ভাষাকে চিনিয়েছেন বিশ্ব দরবারে। ছিনিয়ে এনেছেন সাহিত্যের নোবেল। বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি জাতির দিকনির্দেশক এক আলোকবর্তিকা। বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনের সবকিছুর সঙ্গেই মিশে আছে রবীন্দ্রনাথ! গত দেড় শতাব্দী ধরে বাঙালির মানসপটে তার দাপুটে অবস্থান। বাঙালির চিন্তার ভূগোল, ভাবের প্রকাশ, রস আস্বাদন— কিছুই সম্ভব না। বাঙালি সত্তায় রবীন্দ্রনাথ সদা জাগ্রত। বাঙালি জীবনে যত ভাব-বৈচিত্র্যের সমারোহ, তার পুরোটাই তিনি ধারণ করেছেন তার গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান, স্মৃতিকথা আর দর্শনে।তাকে ধারণ করা ছাড়া বাঙালির পক্ষে সত্যিকার অর্থে বাঙালি হয়ে ওঠা সম্ভব না। তার সাহিত্যকর্ম, সংগীত, জীবনদর্শন, মানবতা— সবকিছুই সত্যিকারের বাঙালি হতে অনুপ্রেরণা জোগায়।
কবিগুরুর ৭৯তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে করোনা সংকটের কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে কোনো অনুষ্ঠান থাকছে না। টেলিভিশন, রেডিও, দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজপোর্টালগুলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও কর্মের ওপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করছে, লেখা প্রকাশ করছে।
শৈশবে তিনি কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নরম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির কনিষ্ঠপুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই মুক্ত বিহঙ্গজীবনই একদিন তাকে ঘরে থেকে বের করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিল। তিনি ভেতর থেকে বাইরে এসে সামনে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই বুকের মধ্যে বিশ্বলোকের সাড়া পেয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখতে শুরু করেন ৮ বছর বয়সে। আটপৌরে বাঙালির মতো তার শুরুটা হয়েছিল কবিতা দিয়ে এবং একদিন সেই কবিতাই তাকে তুলে ধরে বিশ্ব দরবারে। তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বকবি।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশে ইংল্যান্ড যান ঠাকুর বাড়ির কনিষ্ঠ (রবীন্দ্রনাথের পর বুধেন্দ্রনাথের জন্ম। কিন্তু তিনি ছিলেন স্বল্পায়ু। সেই হিসেবে রবীন্দ্রনাথকেই কনিষ্ঠ পুত্র বলা হয়) পুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেখানে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। আজন্ম রোমান্টিক কবিকে যেন বাংলার নদী, বাংলার জল, বাংলার পাখি, বাংলার ফল হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। তাই মাত্র দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়েই দেশে ফিরে আসেন। এর তিন বছরের মাথায় পারিবারিক রেওয়াজ মেনে ১৮৮৩ সালের ভবতারিণীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সদ্য কৌশোর পেরেনো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী।
সন্ন্যাস জীবনের স্বপ্ন কখনো দেখেননি রবীন্দ্রনাথ। বরং সন্ন্যাস জীবনের ঘোরবিরোধী ছিলেন তিনি। পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়।’ সে কারণেই হয়তো সংসার সাধনার মধ্যেই চলতে থাকে তার সাহিত্যচর্চা। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। মৃত্যুর মাত্র এক মাস আগে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসের শেষের দিকে শান্তিনিকেতন ছেড়ে কোলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে ফিরে যান। সেখানেই ২২ শ্রাবণ মহাপ্রয়াণ ঘটে তার।
রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে। তার চিঠিপত্র, ভ্রমণ কাহিনীর সংকলনও বাংলা সাহিত্যের আকর গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত। একজন চিত্রশিল্পী হিসেবেও তার অবদান কম নয়। সুর স্রষ্টা,ব্যকরণবিদ, শিল্প সমালোচক, দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ হিসেবেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমানভাবে পরিচিত।১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে অঙ্কিত তাঁর স্কেচ ও ছবির সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। মানবতাবাদী এ কবি মানুষের ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল ছিলেন। তাঁর মতে, মানুষই পারে অসুরের উন্মত্ততাকে ধ্বংস করে পৃথিবীতে সুরের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে। তাই ‘সভ্যতার সঙ্কট’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।’ ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সেই উপাধি বর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের জীবনের শেষ চার বছর ঘন ঘন অসুস্থতার মধ্য দিয়ে গেছেন। এ সময়ের মধ্যে দু’বার অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল কবিকে। ১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়েছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল। তখন সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। প্রথম জীবনে ভানুসিংহের পদাবলীতে কবি লিখেছিলেন মরণ রে/ তুঁহু মম শ্যামসমান… মৃত্যু অমৃত করে দান।একইভাবে মৃত্যুকে জীবনের নিস্তাররূপে বর্ণনা করে তিনি উচ্চারণ করেন- প্রেম বলে যে যুগে যুগে, তোমার লাগি আছি জেগে, মরণ বলে আমি তোমার জীবনতরী বাই। জীবনের শেষ দিকে এসে কবি জীবনের প্রতি নিজের তৃষ্ণার কথা জানিয়ে লেখেন বিখ্যাত সেই পংক্তি মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই। বলাই বাহুল্য, মানবের মাঝে রবীন্দ্রনাথের বেঁচে থাকার এ স্বপ্ন শতভাগ পূর্ণতা পেয়েছে। মহাপ্রয়াণ দিবসে আজ বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সঙ্গীতের কিংবদন্তি পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে সারাবিশ্বের বাঙালী।