আনোয়ারায় মধ্যরাতে ৮ যুবক চারটি মোটরসাইকেলযোগে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হাজির হন। এরপর নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে দাবি করে তাকে তুলে নিয়ে যান তারা। পরে ওই ব্যবসায়ীকে পটিয়ার ভেল্লাপাড়া এলাকায় এনে আটকে রেখে দশ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে এক লাখ ৮০ হাজার ৫শ’ টাকা তাদের হাতে তুলে দেয়ার পর আবদুল মান্নান নামে ওই ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ঘটনাটি ঘটে গত ৩ ফেব্রূয়ারি রাতে। টাকা দিয়ে ছাড়া পাওয়ার পর ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান আনোয়ারা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশের তদন্তে ঘটনার সাথে নগর পুলিশের ৬ কনস্টেবলের জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে। তারা নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে স্পেশাল আর্মড ফোর্স বা এসএএফ শাখায় কর্মরত। এর মধ্যে একজন আবার সিএমপি কমিশনারের বডিগার্ডের দায়িত্বেও রয়েছেন। নিশ্চিত হওয়ার পর গত রবিবার রাতে ছয় কনস্টেবলকে আনোয়ারা থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয় সিএমপি।
আনোয়ারা থানা পুলিশ গতকাল সোমবার সকালে তাদেরকে বিচারিক হাকিম শিপলু কুমার দে-এর আদালতে হাজির করে। আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। ব্যবসায়ীকে তুলে এনে মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়া ছয় কনস্টেবল হলেন, আবদুল নবী, এসকান্দর হোসেন, মনিরুল ইসলাম, শাকিল খান, মোহাম্মদ মাসুদ এবং মোর্শেদ বিল্লাহ। আদালতে নিযুক্ত জেলা পুলিশের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) মো. হুমায়ুন কবির জানান, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সিএমপির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আবদুর রউফ জানান, ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে তুলে এনে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তদন্তে ছয় পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একইসাথে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান জানান, ঘটনার দিন দিবাগত রাত দুইটার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে সাত-আটজন তরুণ আনোয়ারার পূর্ব বৈরাগে তাদের গ্রামের বাড়িতে এসে তার ভাই আবদুর নুরকে খোঁজেন। আবদুর নূর বাড়িতে না থাকায় তারা তাকে ধরে নিয়ে যায়। লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরা অবস্থায় তারা তাকে তিন কিলোমিটার দূরে চাতরি রোডের উত্তর দিকে নিয়ে যায়। তারপর বাড়িতে ফোন করে দশ লাখ টাকা এনে দিতে বলে। অত রাতে এত টাকা কোথায় পাব- এমনটা বলার পর ২০ মিনিটের মধ্যে তিন লাখ টাকা এনে দিতে বলে। মান্নানের মোবাইল ফোন থেকেই তার পরিবার-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপহরণকারীরা। এরপর তাকে নিয়ে পটিয়া থানার ভেল্লা পাড়া ব্রিজের পূর্ব পাশে কৈয়গ্রাম এলাকায় নিয়ে যায়। তারা খুবই অস্থির ছিল। এক ঘণ্টা পর আমার ভাইয়েরা এক লাখ ৮০ হাজার ৫শ’ টাকা যোগাড় করে সেখানে এসে পৌঁছায়। এরপর অপহরণকারীরা টাকা নিয়ে আমাকে সেখানে রেখেই চলে যায়। তাদের একজনের গায়ের জ্যাকেটে ‘ডিবি’ লেখা ছিল। আর পরস্পরের সাথে কথোপকথনের সময় তিনি একজনকে মোরশেদ নামে ডাকতে শোনেন। পরদিন তিনি আনোয়ারা থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মামলা করেন।