আজ মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি )দুইদিন আগে চিড়া, গুড়, মুড়ি নিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। অধীর আগ্রহ, কবে এসে পৌঁছাবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সামনের সারিতে বসে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে একজন গৃহ শিক্ষকের স্মৃতিচারণ করলেন ফেনী বাজারের ব্যবসায়ী মাহবুব। তবে এমন উদাহরণ সেদিন উদাহরণ ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তির দাবি, অসংখ্য মানুষ এভাবেই অধীর আগ্রহে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে কয়েক রাত ফেনীর বারাহীপুর, ধর্মপুরে পুরাতন বিমান বন্দরে কাটিয়েছিলেন।
আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ১৯৭৩ সালে এই দিনে ফেনী এসেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পরে এটিই ছিল ফেনীতে তার প্রথম আগমন। জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে বিশাল জনসমাবেশে বক্তব্য রেখেছিলেন তিনি।
এতে জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু জানিয়েছিলেন,‘বাঙালীর সুখী ভবিষ্যতই আমার লক্ষ্য’। এ বাক্যটি শিরোনাম করে পরের দিন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিল দৈনিক বাংলা।ফেনীর বুকে সেদিনের জনসমুদ্র জাতির পিতা বলেছিলেন, বাংলাদেশের সকল নাগরিক সমান। তাদের সমান অধিকার ও সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কারণ, তারা দেশমাতৃকার সন্তান (বাসস পরিবেশিত সংবাদ সূত্রে দৈনিক বাংলা, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩)
বঙ্গবন্ধু বক্তব্যে বলেন, তিরিশ লাখ শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া হবে না। সুতরাং দেশের প্রত্যেকটি মানুষকেই এ জন্যে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে (একই সূত্র)।
১৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় শিরোনাম করে ‘সার্বভৌম জাতি হিসেবে সফল হতে হবে : ফেনীর নির্বাচনী জনসভায় বঙ্গবন্ধু’। পত্রিকাটি লেখে, জনগণকে খেত-খামার ও কারখানায় অধিক উৎপাদনের জন্যে আত্মনিয়োগ করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, সরকারের সাথে উন্নয়ন এবং গঠণমূলক পরিকল্পনা ও কাজে জনগণের সহযোগিতা এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই এ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের জন্যে অত্যাবশ্যক।
একই পত্রিকায় উল্লেখ করা হয় বঙ্গবন্ধু সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বাস্তবায়নে জনগণের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, এ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন এবং জনগণের ভাগোন্নয়ন করতে হলে সকলকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে অন্যথা কোন অলৌকিক শক্তি তা করতে পারবে না।
ফেনী মহকুমার তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি মরহুম খাজা আহম্মদ ছিলেন এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর হওয়ায় সে সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা হোসেন এ সমাবেশের প্রস্তুতিতে নিয়োজিত একজন স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে পূর্বেই ধারণা করা হয়েছিল সমাবেশটি বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হতে পারে। তাই শহরতলীর বারাহীপুরে বিমানবন্দরে এ সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। নিজের স্মৃতি হাঁতড়ে তিনি দাবি করেন, মঞ্চের আকার দৈর্ঘ্যে ৪০ ফুট, প্রস্থে ২০ ফুট এবং উচ্চতায় ১০ ফুট ছিল। মঞ্চটি বাঁশ ও মাটি দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল। আনুমানিক ১২টা নাগাদ বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারযোগে সভাস্থলে উপস্থিত হন।
ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান বিকম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জনসভার মত ফেনীর ইতিহাসে এত মানুষের সমাগম এখনো ঘটেনি। নোয়াখালী জেলা ছাড়াও কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, পার্বত্য অঞ্চল হতে মানুষ যোগ দিয়েছিলেন সমাবেশস্থলে।