নগরীতে নিত্যপণ্যের বাজার ও মুদি দোকানে উপচে পড়া ভিড় মানছে না সামাজিক দূরত্ব

আগামীকাল সোমবার থেকে লকডাউন এমন খবরে হঠাৎ নিত্যপণ্য কেনার হিড়িক পড়েছে কাঁচাবাজার ও মুদি দোকানে। শনিবার সকালে লকডাউনের খবর প্রকাশ হওয়ার পর বিকাল থেকে বাজার ও মুদি দোকানে ভিড় জমাতে থাকেন সাধারণ মানুষ। শুধু মুদি দোকান নয়, বেকারির দোকানেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।নগরের চকবাজার, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এবং বিভিন্ন মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এমনিতে ঊর্ধ্বমুখী এর সাথে লকডাউনের খবরে পণ্য মজুদ করলে দাম আরো বাড়ানোর সুযোগ নেবে অসাধু ব্যবসায়ীরা, বলছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশ অব বাংলাদেশ ক্যাব।

‘গতবছরও লকডাউনের সময় মানুষের মধ্যে নিত্যপণ্য মজুদের হিড়িক দেখা গেছে। ফলে দাম বাড়ানোর সুযোগ নিয়েছিল অসাধু ব্যবসায়ীরা। এবার যাতে এরকম কিছু না হয় সেদিকে ভোক্তাদের সজাগ থাকতে হবে। শুধু নিজেদের কথা চিন্তা না করে খেটে খাওয়া মানুষের কথাও সকলকে ভাবতে হবে।’ তিনি ভোক্তাদের নিত্যপণ্য মজুদ ও একসাথে না কেনার অনুরোধ জানান।
চকবাজার ও বহদ্দারহাট ঘুরে দেখা গেছে, মুদির দোকানগুলোন সামনে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। সিরিয়াল অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে পণ্য। মানুষের চাপে হিমশিত খেতে হয় বিক্রেতাদের। তবে লাইনে দাঁড়ানো কারো সাথে কারো ছিল না সামাজিক দূরত্ব। দোকানিদের অনেকেই পড়েননি মাস্ক।
মুদি দোকানিরা জানান, লকডাউনের খবরে হঠাৎ দুপুরের পর থেকে নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়েছে। অনেকে এক সপ্তাহের পণ্য আবার অনেকে একমাসের পণ্যও ক্রয় করেছেন। চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, লবণ ইত্যাদির চাহিদা বেশি।
জানতে চাইলে চকবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা রাকিব নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘মাস শেষ হয়েছে তাই বাজার করতে এসেছি। লকডাউনের খবরে বাজার করতে আসিনি।’ এ সময় তাকে চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, দুধ, চিনি ইত্যাদি তালিকা করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে আসা গৃহিনী ইয়াসমিন হাসান বলেন, ‘আমি প্রতি সপ্তাহে বাজার করি। বাসায় চাল শেষ হয়ে গেছে তাই কিনতে আসলাম। এছাড়া কিছু সবজিও কিনতে হবে।’
এদিকে সামর্থ্যবানরা নিত্যপণ্য কেনার হিড়িকে পড়লে লকডাউনের খবরে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। তাদের চিন্তা ১ সপ্তাহ লকডাউন তারা কিভাবে পার করবেন। এজন্য তারা সরকারের সহযোগিতা ও সহায়তা চেয়েছেন।
চকবাজার চকসুপার মার্কেটের সামনে প্রতিদিন ছেলেকে নিয়ে পেঁয়াজ, রসুন, আদা বিক্রি করেন কে বি আমান আলী রোডের ইউসুফ কলোনীর বাসিন্দা মঞ্জুরা বেগম।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে বিভিন্ন মেসে রান্নার কাজ করতাম। কিন্তু গতবারের লকডাউনে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে পেঁয়াজ, রসুন, আদা বিক্রি করে কোনোরকম দিন পার করছি। আবারও লকডাউন দিচ্ছে শুনলাম। তাহলে চলব কিভাবে, খাব কি? কে দেবে আমাদের?’ গতবার তিনি শুধু ৫ কেজি চাল পেয়েছেন বলে জানান।
আন্দরকিল্লার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আজাদ বলেন, ‘এখনও আগে বারের ধাক্কা সামলে উঠতে পারিনি। দায়-দেনায় জর্জরিত হয়ে আছি। সরকার যেন আমাদের মত খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিন্তা করে।’
রিকশা চালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘৭-৮ জনের পরিবারের খরচ নিজেকে একাই টানতে হয়। দিনে এনে দিনে খায় এমন অবস্থায় চলতে হচ্ছে। এর মধ্যে আয় রোজগার একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে না খেয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’