করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনে, কঠোর হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। ফলে সরকার ঘোষিত চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে কঠোর লকডাউনের কথা জানান,জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। শুক্রবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন।

তিনি জানান, ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যে জরুরি সেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আমাদেরকে টোটাল (সর্বাত্মক) লকডাউনের দিকে যেতে হচ্ছে। আগামী রোববার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সবকিছুই বন্ধ থাকবে। আশা করছি, দেশের মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি চিন্তা করে যে যেখানে আছেন সেখানেই অবস্থান করবেন। সর্বাত্মক লকডাউন সফল করার বিষয়ে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানান, সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করলেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের প্রেক্ষাপট আরও খারাপ হতে পারে। সেজন্য সরকার ভেবেছে, কঠোর লকডাউনে যাওয়ার। নতুবা পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে বর্তমানে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আর সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যে পার্থক্য কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সর্বাত্মক লকডাউন বলতে যে চিন্তাটি করা হয়েছে সেটা হলো শুধু জরুরি সেবা ছাড়া আর কোনো কিছুই চলবে না। এখন যেমন কিছু কিছু বিষয়ে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে, সেটি তখন আর করা হবে না। দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরাও এই পরামর্শ দিয়েছেন।’

এ ব্যাপারে রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সেখানে বিস্তারিত থাকবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আজ রাতে এনটিভি অনলাইনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তা ছাড়া পরামর্শক কমিটি আরও বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া দেশের আরও অনেক জনস্বাস্থ্যবিদ সরকারকে কঠোর লকডাউনের পথে হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেসব পরামর্শ নিয়ে ভেবেছে। তারপর এ সিদ্ধান্ত। আগামীতে যে লকডাউনের কথা চিন্তা করছে সরকার, তা কঠোর হবে অনেক। প্রয়োজনে মানুষকে লকডাউন মানাতে কঠোর হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেকটি সূত্র বলেন, এখন যেটা চলছে সেটাকে লকডাউন বলেন আর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ বলেন; তা চলছে খুবই ঢিলেঢালাভাবে। এভাবে আসলে করোনা পরিস্থিতিকে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা নিয়ে এরই মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

সূত্রটি বলছে, বর্তমানে সব ধরনের গণপরিবহন চলছে। বাজার, শপিংমল খোলা। অফিস–আদালত, ব্যাংক, বিমা সবকিছুই খোলা। বেসরকারি খাতের সবকিছুই খোলা। খোলা রয়েছে শিল্প-কলকারখানাও। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এসব কোনো কিছুই চলবে না। অর্থাৎ সব কিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। তেমন নির্দেশনা আগামী রোববার সরকার দিয়ে দেবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রটি বলছে, তবে জরুরি সেবার ব্যাপারটা চলমান থাকবে। নতুবা মানুষ তাঁর মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারবে না। সেজন্য জরুরি সেবার মধ্যে ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। শুধু তাই নয়, জরুরি সেবা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, স্বাস্থ্য, ত্রাণ বিতরণ, ইন্টারনেট, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আনা–নেওয়া ও এর সঙ্গে জড়িত অফিসগুলো খোলা থাকবে। তবে এসব খোলা রাখার ব্যাপারেও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে। সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধের ঘোষণা করে সরকার। কার্যকরের আগের দিন অর্থাৎ গত রোববার (৫ এপ্রিল) তা নিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করে সরকার। প্রজ্ঞাপনে সারা দেশে গণপরিবহণ বন্ধের কথা বলা হলেও গত বুধবার থেকে পুনরায় গণপরিবহণ চলাচল শুরু করা হয়। এ ছাড়া আজ শুক্রবার থেকে সীমিত সময়ের জন্য খুলেছে দোকানপাট, শপিংমল।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখার উপসচিব মো. শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়েছিল, অর্থাৎ গত ৫ এপ্রিল থেকে যেসব নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে তার মধ্যে আছে-

সকল প্রকার সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। (তবে, সরকারি নির্দেশে, বুধবার থেকে মহানগরে গণপরিবহন সীমিত আকারে চলছে।) এ ছাড়া পণ্য পরিবহণ, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হচ্ছে না। এ ছাড়া বিদেশগামী/বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে না।

আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন-ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকছে।

সব সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারছে। শিল্প-কারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু আছে। শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করা হচ্ছে।

সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না।

খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (টেকঅ্যাওয়ে/অনলাইন) করা যাচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাচ্ছে না।

শপিংমলসহ অন্যান্য দোকানসমূহ বন্ধ থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে আজ থেকে সীমিত আকারে খোলা থাকছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাবস্থায় কর্মচারীদের মধ্যে আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হচ্ছে।

কাঁচাবাজার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাচ্ছে।

ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে।

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকায় সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল।

সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করেছে।