লালমনিরহাটে বসবাসের আগেই ভেঙে গেলো প্রধানমন্ত্রীর উপহার

লালমনিরহাটে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বসবাস শুরু করার আগেই সামান্য ঝড়ে ভেঙে গেলো। উপহারের তালিকায় নেই উপহার নেই পানি, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগের রাস্তা। নির্মান হলেও কেউ থাকছে না ভুঁতড়ে এসব ঘরে।শুক্রবার ভোর রাত সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কোদালখাতা আশ্রয়নে সামান্য ঝড়ে ভেঙে পড়েছে বারান্দার পিলার ও উড়ে গেছে ঘরের টিন।

সূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে ভুমিহীনদের পাকা বাড়ি উপহার দিতে আশ্রয়ন প্রকল্প ২ গ্রহন করে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ভুমিহীন পরিবারের জন্য দুইশতাংশ জমি, দুই কক্ষের একটি পাকা ঘর, রান্না ঘর ও টয়লেটেসহ একটি বাড়ির মালিকানা উপহার প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সদর উপজেলায় ১৫০টি পরিবারের আবাসনের জন্য অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হয়। প্রতিটি বাড়ির নির্মাণ ব্যায় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রথম দিকে খাস জমি সনাক্ত করে ভুমি অফিস। এরপর সেই খাস জমিতে পাকা বাড়ি তৈরীর কাজ বাস্তবায়ন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) উত্তম কুমার।
সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কোদালখাতা এলাকায় ১০টি ভুমিহীন পরিবারের জন্য ১০টি বাড়ি নির্মান করা হয়। দীর্ঘ ২মাস আগে এসব বাড়ির নির্মান কাজ শেষ হলে সুফলভোগিদের হাতে জমির দলিল ও বাড়ির চাবি হস্তান্তর করে সদর উপজেলা প্রশাসন। বাড়ির চাবি হস্তান্তরের ২মাস অতিবাহিত হলেও যোগাযোগের রাস্তা, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় কোন সুফলভোগি বসবাস শুরু করেননি। ফলে ফসলের ক্ষেতের মাঝে ভুঁতড়ে বাড়িতে পরিনত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার।সামান্য ঝড়ে ঘরের বারান্দার পিলার ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। উড়ে গেছে বারান্দাসহ ঘরের ছাউনির টিন। বসবাস শুরুর আগেই ভেঙে পড়ায় আতংক বিরাজ করছে সুফলভোগিদের মাঝে।
সুফল ভোগি ও স্থানীয়রা জানান, নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে দায়সারা ভাবে কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। টয়লেটে সিরামিকের প্যান বসানোর কথা থাকলেও বসানো হয়েছে প্লাস্টিকের প্যান। ব্যবহারের আগেই ফেঁটে চৌচির টয়লেট। নেই পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা। চলাচলের মত রাস্তাও নেই। শুরু থেকে ভাল মানের কাজের দাবি করে আসলেও সুফলভোগিদের সেই দাবি কেউ রাখেনি। এখন সামান্য ঝড়ে ভেঙে চুরমার হয়েছে ভুমিহীনদের স্বপ্নের সেই পাকা ঘর। ঘুমন্ত শরীরের ঘর ভেঙে পড়ার আশংকায় কেউ বসবাস শুরু করেন নি।

সুফল ভোগি হালিমা বেগম জানান, ১০ বছর আগে স্বামী তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছেন। সেই থেকে বাবার বাড়িতে ঝুপড়ি ঘরে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভুমিহীন হওয়ায় জমিসহ পাকা ঘর উপহার পাওয়ার খবরে বেশ আনন্দই পান তিনি। জমির দলিল ও বাড়ির চাবি পেলেও থাকার পরিবেশ নেই নবনির্মিত আশ্রয়নে। তাই বসবাস শুরু করেননি। এরই মধ্যে সামান্য ঝড়ে ভেঙে গেছে তার উপহারের ঘর। ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বলেও কোন কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ভেঙে যাওয়া ইট ও টিনগুলো সড়ায়ে নিচ্ছেন পরম যত্নে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, স্টিমেট অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। যা বরাদ্ধ তাই ব্যায় করা হয়েছে। ঝড় হলে তো ঘরে ভেঙে যেতেই পারে। ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামত করে দেয়া হবে। একই সাথে পানি,বিদ্যুৎ ও চলাচলের রাস্তাও খুব দ্রুত করে দেয়া হবে।