নানা চড়াই–উতরাই শেষে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন :রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

উচ্চতর শিক্ষার ডিগ্রি ডক্টর অব ফিলোসফি (পিএইচডি) লাভ করলেন রবীন্দ্রসংগীতের বরেণ্য শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। মাস খানেক আগে ১০ বছর ধরে চলতে থাকা বন্যার পিএইচডি কোর্সের অধ্যায় শেষ হয়েছে। এখন তাঁর নামের সঙ্গে ‘ডক্টর’ যোগ করা যায় বলেও জানান রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা তাঁর পিএইচডি ডিগ্রির পাঠ চুকিয়েছেন। শুরুতে এই কোর্সে তাঁর গাইড হিসেবে ছিলেন ড. মৃদুল চক্রবর্তী এবং পরে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা যখন তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন, তখন তাঁরা দুজনের পৃথিবীর ভ্রমণ শেষে পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন। এ নিয়ে বেদনাভারাক্রান্ত দেশের এই বরেণ্য সংগীতশিল্পী।

বন্যা জানান, পিএইচডিতে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘রবীন্দ্রসংগীতের দুই পর্ব—নদীতীরে ও শুষ্ক মাটিতে’। এটা কম্পারেটিভ স্টাডিও বলছেন তিনি। নদীতীর বলতে এখানে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন পূর্ববঙ্গ আর শুষ্ক মাটি বলতে শান্তিনিকেতনকে বুঝিয়েছেন।

পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘আমি খুবই এক্সাইটেড। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনের অন্যতম অর্জন। শেষ পর্যন্ত পিএইচডি কমপ্লিট করতে পেরেছি! আমি যখন পিএইচডি শুরু করি, তখন আমার গাইড আমারই বন্ধু ড. মৃদুল চক্রবর্তী মারা গেল। শেষের দিকে আবার আরেকজন গাইড ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানও মারা গেলেন। বলা যেতে পারে, আমাকে নানা চড়াই–উতরাই পার করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত শেষ করতে পেরেছি, এটাই অনেক বড় বিষয়।’

রবীন্দ্রসংগীতের দুই পর্ব—নদীতীরে ও শুষ্ক মাটিতে’ এই বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করার পথে রবীন্দ্রসংগীতই তাঁকে সবচেয়ে বেশি চালিত করেছে বলে জানালেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তিনি বলেন, ‘নানান ব্যস্ততার মধ্যেও আমার গাইডরা তো বটেই, বাড়ির লোকেরা ভীষণ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আরেকটা কথা বলব, আমাকে সবচেয়ে বেশি চালিত করছে রবীন্দ্রনাথের গান। যেহেতু আমি রবীন্দ্রসংগীত গাই, তাই আমার জন্য এই বিষয়টা ভীষণ ভালো লাগারও ছিল। আমার কাজটা নতুন প্রজন্মের যারা রবীন্দ্রসংগত নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখবে, তাদের খুব কাজে লাগবে।’কথায় কথায় রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘২০১১ সালের রবীন্দ্রনাথের সমস্ত গানের সংকলন নিয়ে শ্রুতি গীতবিতান করেছি, রেকর্ডেড ভার্সন। বলা যেতে পারে, আমার পিএইচডি তারই একধরনের ধারাবাহিকতা। ওইটা ছিল প্র্যাকটিক্যাল, সব গানের লাইভ রেকর্ডিং, আর এটা হচ্ছে, ওটারই একটা একাডেমিক ভার্সন। গানের তথ্য, বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ইত্যাদি। শুরু করেছিলাম ২০১১ সালের দিকে। প্রথমে আমার বন্ধু মৃদুল চক্রবর্তীই বলত, পিএইচডি ডিগ্রিটা করো, করো। বিষয়টা যখন নির্বাচিত হলো, তখন অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সঙ্গেও কথা বললাম, তিনিও উৎসাহ দিয়ে বললেন, কর, কর। এই ধরনের কাজ আগে হয়নি। যাঁরা আমার গাইড ছিলেন, তাঁরা কেউই আজ বেঁচে নেই, এটা আমাকে ভীষণ বেদনাভারাক্রান্ত করে। এ ছাড়া আমার গুরু কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাবা মাজহারুদ্দিন খান এই ডিগ্রি অর্জনের খবরটা শুনে খুবই গর্বিত হতেন। বাবা অনেক বেশি খুশি হতেন, কারণ শেষ পর্যন্ত এটা আমি শেষ করতে পেরেছি। আমি যখন পিএইচডি নিয়ে পরিকল্পনা করছিলাম, প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, ২০১১ সালের ওই সময়টায় আমার আব্বা মারা গেলেন। শুরুটাও দেখে যেতে পারেননি!’

বন্যা বললেন, ‘শুনেই আমার বাবা বলছিলেন, পড়ো পড়ো। বাবা পড়াশোনা খুব ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, শুধু গানবাজনা করলে তো হবে না, পড়াশোনাও করতে হবে। এই পিএইচডি ডিগ্রি আমার বাবা, গুরু এবং গাইডদের প্রতি একধরনের ট্রিবিউট। শেষ পর্যন্ত আমি আসলে শেষ করতে পারলাম।’