ব্যান্ড ‘জলের গান’স্টুডিওতে সুরের আড্ডায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট

শিল্প-সংস্কৃতির তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত ফ্রান্স। সেই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান শিল্পানুরাগী হবেন এটাই তো স্বাভাবিক। সেটা প্রমাণ করতেই কিনা কে জানে, ঢাকা সফরে এসে মধ্যরাতে বাংলাদেশের বিখ্যাত গানের দল জলের গানের স্টুডিও পরিদর্শন করলেন ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রবিবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘জলের গান’–এর সংগীতশিল্পী, গীতিকার এবং যন্ত্রশিল্পী রাহুল আনন্দের ব্যক্তিগত স্টুডিও পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নৈশভোজে যোগদানের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট রাহুলের স্টুডিও পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি রাহুলের গাওয়া লোকগান শোনেন এবং তার কাছ থেকে বাংলাদেশের জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র একতারা বাজানোর চেষ্টা করেন।

রাহুল এবং তার চিত্রশিল্পী স্ত্রী উর্মিলা শুক্লার ধানমন্ডির ভাড়া বাড়িতে স্থাপিত স্টুডিওতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট সেখানে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় কাটিয়েছেন, গান উপভোগ করেছেন এবং জলের গান শিল্পীদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন।

তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ম্যাক্রোঁ সাথে ছিলেন। এছাড়া আশফিকা রহমান, কামরুজ্জামান স্বাধীন ও আফরোজা সারাসহ অন্যান্য শিল্পীরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় রাহুল আনন্দকে কলম উপহার দেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ফরাসি প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে কলম পেয়ে অভিভূত রাহুলও তাকে একটি উপহার দেন। ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে একতারা উপহার দিয়ে রাহুল বলেন, বাঙালির নিজস্ব এই বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। এটা আপনাকে বাংলাদেশের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। উপহার গ্রহণ করে ফরাসি প্রেসিডেন্টও বলেন, এটা আমাকে বাংলাদেশের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির জলের গানের স্টুডিও পরিদর্শন নিয়ে গায়ক, গীতিকার ও মেধাবী বাদ্যযন্ত্র শিল্পী রাহুল আনন্দ বলেন, শিল্পী এবং শিল্পের প্রতি আগ্রহ থেকেই জলের গানের স্টুডিও পরিদর্শন করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। মুগ্ধ হয়ে গান শুনেছেন বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর এই মানুষটি। এমনকি নিজে বাঁশি বাজিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন তিনি। তার সামনে বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে জলের গান। ফ্রান্সের সাথে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিনিময় নিয়েও আলোচনা হয়েছে তার সঙ্গে।

রাহুল আনন্দ বলেন, তিনি (ম্যাক্রোঁ) আমাকে একটি কলম উপহার দিয়েছেন এবং এই কলম দিয়ে প্রকৃতি এবং জীবনের গান ও কবিতা লিখতে বলেছেন। একদিন তিনি সেই সঙ্গীত শুনবেন। রাহুল আনন্দ লালন, প্রতুল মুখার্জি, আব্বাস উদ্দিন ও আবদুল আলিমের গান পরিবেশন করেন এবং এ সময় ম্যাক্রোঁকে গভীর মনোযোগ সহকারে গান শুনতে দেখা যায়। এর পাশাপাশি সফরকালে ম্যাক্রোঁ নৌকা ভ্রমণ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক সংলাপে অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশি রান্নার স্বাদ নেন।ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সাথে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে রাহুল আনন্দ লিখেছেন, একটি সুন্দর পারিবারিক  ছবি। যদিও তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি। ভাঙা বাড়িতে আনন্দের হাট-বাজার! কৃতজ্ঞ আমাদের বাড়িওয়ালার প্রতি যিনি আমাদের এই ভাঙা বাড়িকে দেখে রাখতে দিয়েছেন।

এর আগে গত রবিবার ১১ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ৮টায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে বহনকারী বিমান ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে স্বশরীরে হাজির হয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনাও দেয়া হয় ফরাসি প্রেসিডেন্টকে। সেখানে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা শেষে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেই নৈশভোজে যোগ দেন।