কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ তম জন্মজয়ন্তী

আজ ২৫ শে বৈশাখ ৮ মে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ তম জন্মজয়ন্তী।
১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জম্মগ্রহন করেন কবি। সার্বজনীন এই কবি বাংলাভাষা সাহিত্যকে নিয়ে গেছেন বিশ্ব দরবারে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে প্রতিভার প্রকাশ ঘটে, বাঙালি জীবনের সর্বত্র রয়েছেন তিনি। তাঁর লেখা কবিতায়, গানে, নাটক, উপন্যাস, গল্পে তিনি বাংলা ও বাঙালি জীবনের ভাললাগা, দুঃখ, কষ্ট, শোক-তাপের প্রায় প্রতিটি মূহূর্ত ধরা পড়েছে।কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ কবি কাহিনীতে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেত গেলেও গতানুগতিক প্রাতিষ্ঠানিক গন্ডীর বাইরে অনন্য এক উচ্চতা ছুঁতে চেয়েছিলেন রবি ঠাকুর।তাঁর রচনা বাঙালি জীবনের সঙ্গে ওতপ্রত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এত বছর পরেও তাঁর রচিত কবিতা, গান, গল্প অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। অনেকেই বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বদলে গিয়েছে অনেকটাই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সমাজ চেতনা, জীবনদর্শন ও সাহিত্য ভাবনা একশো বছর পেরিয়েও সমান প্রাসঙ্গিক। আজ যখন দিকে দিকে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা মাথা চাড়া দিচ্ছে, তখন রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনা যেন মুক্তির পথ দেখায়। শুধুমাত্র নিজের শান্তি বা মুক্তির জন্য ধর্ম নয়, মানুষের কল্যাণের জন্য যে সাধনা, তাই ছিল তাঁর ধর্ম। বাংলা সাহিত্যকে তিনি বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসনে বসিয়েছিলেন। ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি এবং এশীয় সাহিত্যিক হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথের রচনা বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বজনীন করে তোলে। গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার ঘোরতর বিরধী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পাঠশালার চার দেওয়ালের মধ্যে খুব বেশি দিন মন টেকেনি তাঁর। তাই নিজের পুঁজি আর পুরষ্কার মূল্য দিয়ে শান্তিনিকেতনে তিনি গড়ে তোলেন ‘বিশ্বভারতী’র মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রকৃতির কোলে, গাছের ছায়ায়, মুক্ত পরিবেশে অনন্য উপায়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষিত করার নতুন পথ দেখালেন তিনি। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে বহুযুগ আগেই বাঙালির পরিচয় করিয়েছিলেন তিনি।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পর ভারত তার স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৪৭ সালে। স্বাধীনতার পরিবর্তে দেশ ভাগের মতো যন্ত্রণাদায়ক চিরস্থায়ী মূল্য চুকাতে হয়েছে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে। আজ ভারত আর বাংলাদেশ, দু’টি পৃথক রাষ্ট্র হলেও এই দুই দেশ আজও একই সুত্রে বেঁধে রেখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথেরই রচিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে কলকাতার জোড়াসাঁকোয়, শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রঙ্গণে এবং বাংলা জুড়ে কয়েকশো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁরই লেখা গানে, কবিতায় ছন্দে ছন্দে আন্তরিকতার সঙ্গে পালিত হয় আজ ও।